রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় গুজব ছড়িয়ে তাসলিমা বেগম রেনুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হৃদয় এবং রিয়া খাতুনকে মুখোমুখি করা হয়েছে। হাজতে রিয়া খাতুনকে দেখেই ঘাতক হৃদয় চিৎকার করে ওঠেন। রিয়ার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন, ইনি প্রথম ‘ছেলেধরা’ বলে চিৎকার করতে শুরু করেন। এরপর আমি লাঠি নিয়ে এগিয়ে যাই। ধীরে ধীরে সেখানে কয়েকশ’ লোক হাজির হতে থাকে। গ্রেফতারের পর রিয়া খাতুন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করতে থাকলেও হৃদয়কে মুখোমুখি করা হলে তিনি চুপসে যান। হৃদয় তাকে অভিযুক্ত করে সেদিনের ঘটনা ফাঁস করতে থাকলে রিয়া খাতুনের আর কিছুই বলার থাকে না। মাথা নিচু করে থাকেন। এক সময় ঘটনার দায় কবুল করে নেন। বাড্ডা থানা পুলিশ জানায়, হৃদয় এবং রিয়া খাতুন দুজনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন পুলিশের কাছে। তাদের গতকালই আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আদালতে দুজনই ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রিয়া খাতুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়া এ মামলায় প্রধান আসামি হৃদয় ওরফে ইব্রাহিমকে গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে গ্রেফতার রিয়া খাতুন ও হৃদয়কে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক। ওই সময় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাইলে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মিল্লাত হোসেন জবানবন্দি নেন। পরে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় হৃদয় তার ছোট খালা বেগম খালেদার বাসায় ছিল। এরপর তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। রিমান্ডের সময়সীমা শেষ জহওয়ার আগেই গতকাল আদালতে হাজির করে পুলিশ। গত ২০ জুলাই শনিবার সকালে ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাসলিমা বেগম রেনুকে (৪০) ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। দুই ছেলেমেয়েকে ভর্তির জন্য সেখানে খোঁজ নিতে গিয়ে গুজবের কবলে পড়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়। পরের দিন রবিবার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উল্টর সোনাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানের বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার বোনের ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গুজব ছড়ানোর অভিযোগে যুবক গ্রেফতার : ফেসবুকে মাথা কাটার গুজব ছড়ানোর অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে ছেলেধরা সন্দেহে এক ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তি হলেন- নড়াইলের নাজমুল হোসেন বাবু (৪০)। অন্যদিকে নাটোরে ছেলেধরা সন্দেহে আটক ভারতীয় নাগরিকের নাম অসীম হাওলাদার (৩৫)। পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগার গুজব ফেসবুকে ছড়ানোর অভিযোগে যুবক গ্রেফতারের বিষয়ে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন নড়াইল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এদিকে নাটোরের বড়াইগ্রামে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছেলেধরা সন্দেহে অসীম হাওলাদার নামে এক ভারতীয় নাগরিককে আটক করে স্থানীয়রা।পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। জানা গেছে, আটক অসীম হাওলাদার ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা এলাকার অতুল কুমার হাওলাদারের ছেলে। তিনি বড়াইগ্রাম পৌরসভার মৌখাড়া এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় লোকজন ছেলেধরা সন্দেহে তাকে ঘেরাও করে।