এ কে আজাদ:

লাখো শহীদের রক্তে ও মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সোনার বাংলাদেশে জন নিরাপত্তায় নিয়োজিত অন্যতম বাহিনী “বাংলাদেশ পুলিশ” যা এখন আর আতংকের নাম নয়,পুলিশ মানে হিংস্র মনোভাবের প্রাণী নয়, পুলিশ মানে শুধুই লাঠিপেটা আর ভীতিকর চরিত্রের বেরসিক দায়িত্বশীল নয়, পুলিশ মানে এখন মানুষের ভালবাসার অরণ্য, পুলিশ মানে এখন মানুষের আস্থা ও নির্ভরতার ঠিকানা, পুলিশ মানে এখন সমাজ ও মানবতার সিনবাদ।

গোটা দেশের প্রশাসনিক দায়িত্বরত পুলিশ বাহিনীর মধ্যে ফেনী দাগনভূঞা থানার পুলিশ এ পর্যন্ত নতুন নতুন কিছু কার্যক্রম ও মানবিক কাজে নিজেদেরকে একত্রিত করে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। এইজন্য দাগনভূঞা উপজেলাতে পুলিশ যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় মানুষের হৃদয়ে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলে নিজেকে ও পুলিশ বাহিনীকে বরেণ্য করেছেন মানবিক পুলিশ অফিসার মো. ইমতিয়াজ আহমেদ। বরিশালের এই সন্তান, জন্ম গ্রহণের পর শৈশব কৈশোর পেরিয়ে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সাব ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। এরপর ২০০৭ থেকে ২০১১ সালে দায়িত্ব পালন করেন ডিএমপির ধানমন্ডি থানায়, এভাবে বিভিন্ন স্থানে সম্মানের সহিত চাকরি করে পদোন্নিত পেয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে খেতাব সহ নানা পর্দক অর্জনের মধ্যে দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে কাজ করে যাচ্ছেন।

পুলিশের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব বিলুপ্ত করে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অজর্ন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। পুলিশের সাথে জনগণের দূরত্ব ঘুচানোর চ্যালেন্জে সফলতাও পেয়েছে অল্প খুবই সময়ে। ফেনী জেলার গুরুত্বপূর্ণ থানা দাগনভূঞাতে বসবাসরত সাধারণ জনগণের মন জয় করে একের পর এক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন ওসি ইমতিয়াজ আহমেদ। সর্বশ্রেণির মানুষ ওসি’র সঙ্গে সরাসরি কথা বলে ও সমাধান পেয়ে থাকেন। আর সে খবর ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলায় জুড়ে। তবে এটাই প্রথম নয়, ফোন কলের মাধ্যমে সেবা দিয়ে অনন্য হয়েছেন মো. ইমতিয়াজ আহমেদ।

২৪ ঘন্টায় ওসিকে ফোনে পাওয়া যায়। মাদকের বিরুদ্ধে শুরু করেন যুদ্ধ, জনমত গড়ে তুলতে তিনি বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরে ছুটে যাচ্ছেন, তেমনি ইভটিজিং ও গ্যাং কালচার রুখতে যাচ্ছেন স্কুল-কলেজে। সেবা প্রদানের ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা করে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করেন ওসি ইমতিয়াজ। জঙ্গিবাদে না জড়ানো, ইভটিজিং না করা, গুজব না ছড়ানোর আহ্বান যেমন রয়েছে, ভাড়া বাড়ির মালিককে সতর্ক করে ভাড়াটিয়া সম্পর্কে খোঁজ রাখার অনুরোধও জানানো হয়েছে। থানা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে, সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।

এছাড়াও কর্তব্যরত থানা এলাকায় উত্ত্যক্তকারী, যৌতুকবিরোধী বিভিন্ন গণসচেতনতা সৃষ্টি করেছেন ওসি ইমতিয়াজ, এতে নারীরা না বলা কথাগুলো বলার জন্য এগিয়ে এসেছেন। উত্ত্যক্ত রোধে উপজেলায় স্কুল কলেজের সামনে ও সন্ধ্যার পর কিশোরদের কারণ ছাড়া আড্ডা দেওয়া রোধ করে অভিভাবকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন ইমতিয়াজ। এ ছাড়া ফেইসবুকে একটি পেজ ও একটি ব্যক্তিগত আইডির মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনার দুঃসময়ে মানুষের পাশে ছিলেন ইমতিয়াজ। করোনাঝুঁকি এড়াতে লোকজন যাতে ঘর থেকে বের না হয়, সে জন্য থানায় ফোন করা হলে বাসায় বাজারও পৌঁছে দেয় পুলিশ। মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে এবং বাইরে জমায়েত বন্ধে করতে বাজার ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেন। লকডাউনের সময় সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে, অযথা ঘোরাঘুরি রোধে সচেতন থাকে থানা পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা প্রধান কাজ হলেও করোনায় ভূমিকা রেখেছেন নানামুখী পদক্ষেপ। সংক্রমিত হবেন জেনেও উপজেলাবাসীকে ঘরে রেখে নিজে থেকে ছিলেন রাস্তায়। গত ২২ অক্টোবর ২০২০, ফেনী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে দাগনভূঞা থানার ওসি পদে বদলি করা হয় মো. ইমতিয়াজ আহমেদকে।

থানা ইমেজ সংকটের মুখে পড়ে, সেই সংকটময় সময়ে থানার ওসি পদে পাঠানো হলো চৌকস সু-পরিচিত মো. ইমতিয়াজ আহমেদকে। ২২ অক্টোবর ২০২০ জেলা পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী এ রদবদলের আদেশ দেন। নতুন থানায় নবাগত ওসি হয়ে যোগদানের শুরুতে দক্ষতার প্রমাণ দিলেন তিনি। নিজের পুলিশী কার্যক্রমের অনুভূতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি মো. ইমতিয়াজ বলেন, সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে থাকে পুলিশ। তবুও পুলিশের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব রয়ে গেছে, ছোটখাট কিছু ভুলের কারণে পুলিশের অনেক বড় অর্জনও ম্লান হয়ে যাচ্ছে, পুলিশের প্রতি মানুষের এই বিরূপ ধারণা দূর করতে এবং আত্মসমালোচনার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে জবাবদিহিতা তৈরি করতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি সকলের সহযোগিতায়। উপজেলাবাসীর মনে নিরাপত্তা বোধটা জাগ্রত করার জন্য আমরা কাজ করছি দিন রাত। জনগণ যেন আমাদেরকে নিজেদের একজন ভাবতে পারেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি ও করবো, অনেক ক্ষেত্রে সফল হবো, অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হবো, ভালো-মন্দ মিলিয়ে যেমন মানুষ, তেমনি সফলতা-ব্যর্থতার দোলাচলে থেকেও আমরা সফল হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। তবে আমার একটা স্বপ্ন হচ্ছে আমি মানুষকে আইন শেখাতে চাই, আইনের হয়ে মানবাধিকার বুঝাতে চাই, আইনেও আলো আছে, তাতে সমাজ বিনির্মানে জ্বালাতে চাই ।

আমি মনে করি সাধারণ মানুষ আইন সম্পর্কে বুঝলে জানলে, কোনটা অপরাধ তার কি শান্তি, কোনটা অপরাধ বা অপরাধ নয় তা সম্পর্কে মানুষের ধারণা থাকলে মানুষ অপরাধ মূলক কাজ থেকে দূরে সরে আসবে, সমাজে অপরাধ নিযন্ত্রণ করা যাবে। আমার ধারণা সাধারণ মানুষ আইনের বিষয়ে তেমন ধারনা নেই বিধায় তারা ছোট ছোট অনেক অপরাধ করতে করতে বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তাছাড়া শিশু কিশোররা মাদক সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, আমার ও আমাদের সীমাবদ্ধতা সবসময় ছিল ও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। এর মধ্যে যতটা পারা যায় করতে হবে, অংশীদারিত্ব তৈরি করতেই এ উদ্যোগ।

পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেন এলাকার মানুষ পুলিশের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাটা তো ধারাবাহিক প্রসেস। জনগণের সাথে পুলিশের দূরত্ব কম থাকলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়ে যায়। সাধারণ জনগণের থানাভীতি দূর করতে আমাদের এই উদ্যোগ ও নিরন্তর প্রয়াস। এদিকে সাধারণ জনগণের সাথে কথা বলে জানা যায়, থানার নতুন ওসি মো. ইমতিয়াজ আহমেদ যোগদানের ৬ মাসের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও যেকোনো সমস্যা সমাধানে ব্যাপক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। এতে জনগণের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করছেন।