প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

কভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশের আট বিভাগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমগুলোর কাজ ঝিমিয়ে পড়েছে। এই ফাঁকে জেলা, মহানগর, উপজেলাসহ তৃণমূল আওয়ামী লীগে কোন্দল লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের লাগাম টেনে দলকে সুসংগঠিত করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের জোরালোভাবে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের এক সভায় শেখ হাসিনা এমন নির্দেশ দেন। দলের একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে উপস্থিত ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মুহম্মদ ফারুক খান।

সভার একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের তিন আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য বৈঠক হলেও সেখানে সাংগঠনিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা ওঠে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ আলোচনার সূত্রপাত করেন। বিভিন্ন উপজেলা ও শহর আওয়ামী লীগে কোন্দলের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, কভিডের কারণে কেন্দ্রের বিভাগীয় টিমগুলোর কাজ স্তিমিত হয়ে আছে। এখন তা আবার জোরালোভাবে শুরু করুন। বিভাগীয় টিমগুলো সাংগঠনিক এসব বিষয় নিয়ে কাজ করলে দলের কাজ সহজ হয়ে যায়। সব বিষয় তখন তাদের দেখতে হবে না। বিভাগীয় টিমগুলো কাজ শুরু করলে অনেক বিষয় তারা দেখতে পারবে। তাদের পরামর্শের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।

সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের বিষয়ে আলোচনা হয়। বেশ কিছুদিন আগে দুর্নীতি, অনিয়ম, চাঁদাবাজির অভিযোগে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্ব পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি ফরিদপুর আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষ শহর আওয়ামী লীগের আলাদা কমিটি করে অনুমোদনের জন্য জমা দিয়েছে বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা। এ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মানা হয়নি বলে বৈঠকে আলোচনা হয়। কোনো কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা নিতে হয়। কিন্তু ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব কেন্দ্রের মত না নিয়েই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি প্রস্তাব করেছে। এটা তারা করতে পারে না বলে সভায় মত দেন একাধিক নেতা।

সূত্র মতে, সভায় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের জমা হওয়া দুটি কমিটির কোনোটিই অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে মত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, হয় বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত নেতাদের দিয়েই দ্রুত একটি সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে, না হয় বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে। সেই আহ্বায়ক কমিটি সম্মেলনের আয়োজন করবে। এই কমিটিতে দুই পক্ষেরই নেতাকর্মীদের রাখতে হবে। তবে বিতর্কিত, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে, এমন কাউকে কমিটিতে রাখা যাবে না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি তৃণমূল সংগঠনে কোন্দল তীব্রভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় এগুলো নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দ্রুত সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয়াদি তত্ত্বাবধান করার জন্য দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও কার্যনির্বাহী সদস্যদের নিয়ে দেশের আট বিভাগেই আটটি সাংগঠনিক টিমকে দায়িত্ব দেওয়া আছে।