অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের সেরা ফুটবল প্রতিযোগিতা ‘কোপা আমেরিকা’ মাঠে গড়িয়েছে। উদ্বোধনী ম্যাচে ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্জা স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের শুরুটাও হয়েছে দুর্দান্ত জয় দিয়ে। রবিবার (১৩ জুন) রাতে পুরো ম্যাচজুড়ে ছিল নেইমার ঝলক। ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে হারানোর ম্যচে একটি গোল করেছেন, অন্য দুটির পেছনেও অবদান রয়েছে এই পিএসজি তারকার। তবে শুধু গোল করা আর করানোটাই তো আর ফুটবলের মূল কথা নয়। এদিন জাদুকরি ফুটবলে দর্শকদের চোখে মায়াঞ্জন বুলিয়ে দিয়েছেন নেইমার দা সিল্ভা স্যান্তোস জুনিয়র। নেইমার-জাদুতে বিমোহিত প্রতিপক্ষের কোচ আর খেলোয়াড়রাও।
একদিন পরেই মাঠে নেমেছিলেন গ্রহের অন্যতম সেরা ফুটবল–জাদুকর লিওনেল মেসি। নিজে দুর্দান্ত খেললেন। অবিশ্বাস্য এক ফ্রি কিকে গোল করে দলকে এগিয়েও নিলেন। তবে না শেষ পর্যন্ত কোপা আমেরিকা ২০২১ এর শুরুটা সুখকর হলো না আর্জেন্টিনার। দুই দুইবার কোপার ফাইনালে যে চিলির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল সেই চিলির সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে লিওনেল মেসিদের। এডুয়ার্দ ভারগাসের গোলে শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়ে চিলি।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা ও চিলি। শুরুতে লিড নিয়েও কোপা আমেরিকার এবারের আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচটা আর্জেন্টিনার শুরু হলো ড্রতে।
ম্যাচের শুরু থেকেই দারুণ গোছালো ফুটবল খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। আর তাতেই তৈরি হতে শুরু করে গোলের সুযোগ। ম্যাচের ১২তম মিনিটে লো সেলসোর দারুণ এক পাসে ডি-বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান লাউতারো মার্টিনেজ। তবে চিলির ডিফেন্ডারের চাপে পড়ে শেষ ছোঁয়াটা দিতে পারেননি তিনি। এর মিনিট চারেক পরে লো সেলসোর আরও এক দুর্দান্ত পাস, এবারে তা কাজে লাগাতে পারলেন না নিকোলাস গঞ্জালেজ। মিনিট দুই পরে আবারও লো সেলসোর পাস পেলেন গঞ্জালেজ এবারে শট নিলেও তা সোজাসুজি চলে যায় চিলির গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভোর কাছে।
৩৩তম মিনিটে লো সেলসোকে ফাউল করায় ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। ডি-বক্সের সামনে রক্ষণের প্রাচীর দাঁড় করায় চিলি, তবে তা থোয়াড়াই পরোয়া করেন মেসি! চিলির রক্ষণ দেওয়ালের উপর দিয়ে গোলপোস্টের কোনা দিয়ে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বল জালে জড়ালেন। যেখানে অসহায়ের মতো তাকিয়েই ছিলেন মেসিরই ক্লাবের সাবেক সতীর্থ চিলির গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো। এদিন মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে ১৪৫তম ম্যাচ খেলতে নামেন। আর্জেন্টিনার হয়ে আর তিনটি ম্যাচে খেলতে নামলে দেশটির হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করবেন এই কিংবদন্তি। বর্তমানে এই রেকর্ডের মালিক হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো।
এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় আলবেসিলেস্তেরা। ৩৮তম মিনিটে আরও একবার দারুণ এক সুযোগ নষ্ট করে দলের লিড বাড়াতে ব্যর্থ লাউতারো মার্টিনেজ। তাতেই প্রথমার্ধ শেষ হয় আর্জেন্টিনার ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থাকার মধ্য দিয়ে।
বিরতি থেকে ফিরে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় পুরোটা। এবারে খেলার নিয়ন্ত্রণে যায় চিলি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতায় ফিরতে পারতো চিলি। পুলগারের দুর্দান্ত এক থ্রু বল খুঁজে নেয় ভারগাসকে, বল পেয়ে তিনি শটও নিয়েছিলেন কিন্তু দারুণ এক সেভে আর্জেন্টিনার লিড ধরে রাখেন গোলরক্ষক মার্টিনেজ। তবে আর বেশিক্ষণ দলের লিড ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
৫৪তম মিনিটে আর্তুরো ভিদালকে ডি-বক্সের ভেতর ফাউল করেন নিকোলাস টাগলিয়াফিকো। এরপর ভিএআর দেখে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাঁজান। পেনাল্টি নিতে আসেন ভিদাল তবে তাঁর নেওয়া শট দারুণভাবে রুখে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক। তবে ফিরতি বল হেড করে জালে জড়ান এডুয়ার্দ ভারগাস। আর তাতেই ম্যাচে ১-১ গোলে সমতায় ফেরে চিলি।
এরপর দুই দলই দারুণ গোলের সুযোগ তৈরি করছিল কিন্তু কিছুতেই গোলের দেখা মিলছিল না। ম্যাচের শেষ দিকে এসে মেসি বাঁ পায়ে ভর করে ডি-বক্সের ভেতর গঞ্জালেজের উদ্দেশে বল বাড়ান কিন্তু লাফিয়ে উঠেও তিনি বল গোলবরাবর রাখতে না পারলে হতাশা বাড়তে থাকে আর্জেন্টিনার। ম্যাচের একদম অন্তিম মুহূর্তে মেসির করা হেড ব্রাভোকে পরাস্থ করলেও চিলির ডিফেন্ডার রোকো বিপদমুক্ত করলে ম্যাচে আর লিড নেওয়া হয়নি আর্জেন্টিনার। আর শেষ পর্যন্ত ওই ১-১ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় দুই দলকে।