নেইমারকে বোতলবন্দি করে রাখলেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি কলম্বিয়া। ব্রাজিল ম্যাচটি জিতেছে সেই নেইমারের একটি ঝলকেই।

নেইমারকে আটকানো সহজ কাজ নয়-আর পাঁচজন কোচের মতো ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের আগে কলম্বিয়া কোচ রেইনালদো রুয়েদাও এমনটাই বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কঠিন এই কাজটাই খুব সুন্দরভাবে করতে পেরেছে তাঁর খেলোয়াড়েরা। আর নেইমারকে বোতলবন্দি করে রাখতে পারলে কী হয় সেটা একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টের পেয়েছে ব্রাজিল।

নেইমারের নিষ্প্রভ থাকার সুযোগ নিয়ে জ্বলে উঠতে পারেননি ব্রাজিলের আর কোনো খেলোয়াড়। স্বাভাবিকভাবেই জয়ের জন্য তাদের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। রিও ডি জেনিরোর স্তাদিও অলিম্পিকো নিলতন সান্তোসে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ব্রাজিল ২-১ গোলে জিতেছে নেইমারের শেষ মুহূর্তের একটি ঝলকে।

এমনিতে নেইমারকে মাঠের খেলায় আটকে রাখা হয়তো সম্ভব। কিন্তু কর্নার, ফ্রি-কিকে ঝলক দেখানো থেকে তো আর আটকে রাখা সম্ভব নয়। ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত একটি কর্নার নিলেন নেইমার। তাঁর সেই কর্নার কিক খুঁজে নেয় বিনা পাহারায় থাকা কাসেমিরোকে। তাঁর হেডেই ম্যাচটি জেতে ব্রাজিল। এর আগে গোল খাওয়ার পর ব্রাজিলকে সমতায় ফেরানো গোলটি করেছেন বদলি হিসেবে নামা রবার্তো ফিরমিনো।

ম্যাচের শুরু থেকেই নেইমারকে স্বাভাবিক ছন্দময় ফুটবল খেলতে দেয়নি কলম্বিয়া। নেইমার বক্সের সামনে বল পেলেই তাঁকে ঘিরে ধরেছে দু-তিনজন। কখনো নেইমারের ওপর চাপ তৈরি করে বল কেড়ে নিয়েছে তারা, কখনো বা ফাউল করে তাঁকে থামিয়েছে।

নেইমার যখন কলম্বিয়ার রক্ষণ ভাঙতে ব্যস্ত ছিলেন, দুর্দান্ত এক প্রতি আক্রমণে এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। মাঝমাঠ থেকে কলম্বিয়ার এক মিডফিল্ডার বল দেন ডান প্রান্তে থাকা কুয়াদ্রাদোকে। ব্রাজিলের একজনকে কাটিয়ে তিনি ক্রস করেন বক্সে। দুর্দান্ত এক অ্যাক্রোবেটিক শটে ব্রাজিলের জালে বল পাঠান লুইস দিয়াস।

গোল দিয়ে রক্ষণটা আরও আঁটসাঁট করে ফেলে কলম্বিয়া। কোনোভাবেই সেই রক্ষণে ফাঁটল ধরাতে পারছিলেন না নেইমার-জেসুসরা। প্রথমার্ধে অবশ্য নেইমারের মতো নিষ্প্রভ ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার জেসুসও। রিচার্লিসন বাঁ উইংয়ে ভালো কিছু বল পেলেও সুযোগ তৈরি করার মতো কোনো আক্রমণ রচনা করতে পারেননি। ফলে ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যেতে হয় ব্রাজিলকে।

দ্বিতীয়ার্ধে তিতে মাঠে নামান রবার্তো ফিরমিনোকে। ব্রাজিলকে একটি পয়েন্ট এনে দেওয়া গোলটি ৭৮ মিনিটে তিনিই করেছেন। বাঁ প্রান্ত থেকে রেনান লোদির ক্রসে বক্সের মধ্য থেকে হেডে গোলটি করেন ফিরমিনো। তবে এ নিয়ে জোর আপত্তি তুলেছে কলম্বিয়া দল। লোদি ক্রস করার আগে বল রেফারির গায়ে লেগেছিল, এখানেই আপত্তি তাদের।

রেফারি অনেকক্ষণ ধরে বিষয়টি নিয়ে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির দায়িত্বে যিনি আছেন তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় দুই দলের খেলোয়াড়েরাই তাঁকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য গোলের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।

ব্রাজিল এই গোলটি পাওয়ার আগেই অবশ্য গোল পেতে পারত ব্রাজিল। অনেক কড়া পহারায় রাখার পর ৬৫ মিনিটে কলম্বিয়ার রক্ষণে ধূলো দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। ফিরমিনোর দুর্দান্ত ফ্লিক থেকে পাওয়া বলটি তিনি কলম্বিয়ার গোলকিপার ওসপিনার কাছ থেকে দূরেও ঠেলে নেন। কিন্তু ডানপ্রান্ত থেকে নেওয়া তাঁর কোনাকুনি শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে।

এই জয়ের পর ৩ ম্যাচে শীর্ষে থাকা ব্রাজিলের পয়েন্ট ৯। এক ম্যাচ বেশি খেলে ৪ পয়েন্ট কলম্বিয়ার।