১৯ নম্বর ওভারের চতুর্থ বলে হ্যাজলওডের বাউন্সারে পেরিস্কোপ শটে বাউন্ডারি মেরেই জয়োচ্ছ্বাসে মাতেন আফিফ। তার ওই বাউন্ডারিতেই অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটের হারের তিক্ত স্বাদ দিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। বায়ো-বাবলের জন্য খেলার সুযোগ পাননি মুশফিকুর রহিম।
ইনজুরির জন্য খেলছেন না লিটন। দুজন সুযোগ পেলে একাদশেও থাকতেন। নুরুল হাসান সোহান হয়তো স্কোয়াডে থাকতেন। কিন্তু না খেলার সম্ভাবনাই বেশি ছিল উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের। সুযোগ পেয়ে ড্যাসিং ব্যাটসম্যান সোহান নিজেকে মেলে ধরেন পুরোপুরি। কিন্তু জয়ের নায়ক ছিলেন তরুণ আফিফ।
চোখ ধাঁধানো কাভার ড্রাইভ, ফ্লিক শট, স্ট্রেইট ড্রাইভে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান তরুণ আফিফ। ক্যারিয়ারের অভিষেক শূন্য রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের নায়ক গতকাল দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন আকাশসম চাপের মুখে। ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দল যখন খাদের কিনারায়, তখন আফিফ ও সোহান দলকে ৫ উইকেটের জয় উপহার দেন অবিচ্ছিন্ন ৫৬ রানের জুটি গড়ে। টানা দুই জয়ে এখন ৫ ম্যাচ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে শুক্রবার সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটা ৬ ম্যাচে দুই জয়। সব মিলিয়ে ১০৪ ম্যাচে ৩৬ নম্বর জয়। রান তাড়া করে এটা ২০ নম্বর জয়।
উইকেটে নেমেই স্টার্কের টানা তিন বলে তিন বাউন্ডারি মেরে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখানো শুরু করেন সাকিব। কিন্তু এন্ড্রু টাইয়ের সুইংয়ে বোকা বনে বোল্ড হওয়ার আগে ১৭ বলে ২৬ রান করেন ৪ চারে। স্টার্ক, হ্যাজলউড, জাম্পাদের পাল্টা আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত রাখতেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন বাঁ হাতি অলরাউন্ডার। কিন্তু সফরকারী বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে মেহেদী ও আফিফ ছাড়া আর কেউই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। ভালো খেলতে থাকা মেহেদী স্ট্যাম্পড হন জাম্পার লেগ স্পিনে। ১২২ রানের টার্গেটে ১১.২ ওভারে ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল টাইগাররা।
সেখান থেকে ছয় নম্বর জুটিতে হাল ধরেন দুই তরুণ আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান। দুজনেই অসি বোলারদের সব আক্রমণ ঠান্ডা মাথায় পাল্টা আক্রমণে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। আফিফ অপরাজিত থাকেন ৩৭ এবং সোহান ২২ রানে। আফিফের ৩১ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৫ চার ও ১ ছক্কা এবং সোহান ২১ বলের ইনিংসে মানেন ৩ চার।
টানা দ্বিতীয়বার টস জিতেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। মিরপুরের ধীরলয়ের উইকেটের আচরণ বুঝতে ব্যর্থ হয়ে প্রথম ম্যাচে পরে ব্যাটিং করেন। সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল না, সেটা ২৩ রানে হারই বলে।
গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচেও টস জিতেন ওয়েড। নতুন উইকেটে টাইগার তিন স্পিনার সাকিব, নাসুম ও মেহেদীকে সাবলীল খেলতে পরে ব্যাট করার সাহসও করেননি। বাধ্য ব্যাটিং করেন এবং প্রথম ম্যাচের তুলনায় অনেক বেশি সতর্ক ছিলেন অসি ক্রিকেটাররা। সেই সতর্কতায় খুব ভালোভাবে স্পিনত্রয়কে সামলে স্কোর বোর্ডে জমা করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২১ রান। আগের ম্যাচে ছিল ১০৮ রান। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন স্কোর। তবে প্রথমে ব্যাট করে পুরো ২০ ওভার খেলে যে কোনো দলের বিপক্ষে গতকালের স্কোরটি সর্বনিম্ন অস্ট্রেলিয়ার। এর আগে অসিদের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৩৩ রান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পার্থে। ঢাকায় পাঁচ ম্যাচ সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া আসে স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, মারনাস লাবুশেন, অ্যারন ফিঞ্চদের ছাড়া দ্বিতীয় সারির দল আসে।
প্রথম ম্যাচে অসিদের ছায়া মনে হয়েছে। গতকালও খুব বেশি শক্তিশালী মনে হয়নি। প্রথম ম্যাচের পর গতকালও সফরকারীদের ত্রাণকর্তা ছিলেন অলরাউন্ডার মিচেল মার্শ। প্রথম ম্যাচে ৪৫ রান করেছিলেন ৪৫ বলে। গতকাল ৪৫ রান করেন ৪২ বলে ৫ চারে। দারুণ ছন্দে থাকা মার্শ তার ২৭ টি-২০ ক্যারিয়ারে যে ৩টি হাফসেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন, তার সবগুলোই গত ৭ ম্যাচের মধ্যে।
মইজে হেনরিক্সও সাবলীল ছিলেন। ৩০ রান করেন ২৫ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায়। গত ম্যাচে টাইগার বোলাররা ৫৬টি ডট নিয়েছিলেন। গতকাল নেন ৫০টি। আগের ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়া নাসুম গতকাল ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে মিতব্যয়ী ছিলেন মেহেদী। ৩ ম্যাচে ১২ রান দিয়ে উইকেট নেন আলেক্স কেয়ারির। প্রথম ম্যাচে স্পিনাররা ছিলেন ত্রাস। গতকাল দুই পেসার মুস্তাফিজ ও শরীফুল ছিলেন দুরন্ত। দুই পেসার ৮ ওভারে ৫০ রানের খরচে তুলে নেন সফরকারীদের ৫ উইকেট।
ডট নেন ২০টি। সৌম্য এক ওভারে ডট নেন ২টি। সবমিলিয়ে পেসাররা ডট নেন ২২টি এবং স্পিনাররা ২৮টি। আগের ম্যাচে স্পিনাররা নিয়েছিলেন ৩৫টি।
প্রথম ম্যাচের মতো গতকালও দারুণ বোলিং করেছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। তার স্পেল ৪-০-২৩-৩।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টাইগার পেসারদের মধ্যে সেরা বোলিং এখন মুস্তাফিজের। আগের ম্যাচের স্পেল ৪-০-১৬-২।