মাহফুজ বাবু;
কুমিল্লায় সৌদি প্রবাসীদের ইয়াবা পাচার সিন্ডিকেটের জামাই শশুর সহ ৬মাদক কারবারি কে গ্রেফতার করেছে ( র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন) র্যাব। মাদক বিক্রির নগদ অর্থ ও প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদক সহ তাদের আটক করা হয়। রবিবার ( ৮ আগষ্ট) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১১, সিপিসি-২ কার্যালয়ে কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন। । শনিবার ভোররাত থেকে দিনভর জেলার আদর্শ সদর উপজেলার বাখরাবাদ ও ধনুয়াখোলা এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে মাদক উদ্ধার সহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা হলো- সদর উপজেলার বাখরাবাদ গ্রামের মৃত রস্তম আলীর ছেলে এমদাদুল হক (৪০), আবু কাউছার (২৬), ধনুয়াখোলা গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম (২৮), নুরুল ইসলামের ছেলে জাকারিয়া (২৭), তাজুল ইসলামের ছেলে মোঃ আলাউদ্দিন (২৭) ও দুর্গাপুর ইউপির বড়দৌল গ্রামের মৃত আব্বাছ আলীর ছেলে এবং গ্রেফতারকৃত এমদাদুল হকের শ্বশুর আব্দুল মতিন (৬২)। প্রেস ব্রিফিংয়ে কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, সদর উপজেলার কয়েকটি পরিবারের সদস্য সৌদি আরবে চাকুরী বা ব্যবসা করার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন সময়ে দেশে এসে বড় পরিসরে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে। দেশে স্বল্প সময়ের জন্য এসে মাদকের বড় ধরনের চালানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে পুনরায় তারা প্রবাসে চলে যায় ।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি গত সপ্তাহে ইয়াবার একটি বড় চালান বিক্রি করে মোঃ লিটন দু-এক দিনের মধ্যে সৌদি আরবে পাড়ি জমাবে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য সহ তাদের আটক করা হয়। অভিযানে তাদের থেকে সর্বমোট ২৭ হাজার ৮৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২ বোতল ফেন্সিডিল, ১ বোতল বিদেশী মদ, ২ কেজি গাঁজা ও মাদক বিক্রয়ের নগদ ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এসময় মাদক ও ইয়াবা কারবারে জড়িত বেশ কয়েকজনের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন ও জব্দ করা হয়। এই পরিবারের সদস্যরা সৌদি প্রবাসে থাকে এবং তারা স্বল্প সময়ের ছুটিতে বাংলাদেশে আসে। তারা প্রবাসে থাকার কারণে এলাকার কেউ সন্দেহ না করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসার পরিচালনা করে। বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পুনরায় সৌদি আরবে পারি জমায়। গ্রেফতারকৃত ও পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালি মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। দেশে বিদেশে ও পর্দার আড়ালে থাকা এ সমস্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অতি শীঘ্রই আরো কিছু অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলায় পলাতক সহ ৮ জনকে আসামীকে করে মামলা দায়ের করেছে। এদিকে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাখরাবাদ এলাকার লিটনের ভাই এমদাদ ও কাউছার সৌদি আরবের রিয়াদ ও আভা এলাকায় ইয়াবার চালান নিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে আটক হয়ে সেদেশে জেল খেটে দেশে আসে। দেশে ভারতীয় এক মাদক ব্যবসায়ী ও কক্সবাজারে হোটেল ব্যবসার অন্তরালে আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারিদের ইয়াবার জোগানদাতা বরুড়া উপজেলার এক ব্যক্তির সাথে বড় পরিসরে মাদকের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। সম্প্রতি ঢাকা এয়ারপোর্টে আটক আন্তর্জাতিক ইয়াবা মাফিয়া ধনুয়াখলার শাহআলমের ড্রাইভার সাদ্দাম ৯হাজার পিস ইয়াবা সহ আটক হওয়ার পর তার কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য ও উজিরপুর এলাকার বাবলু নামে এক যুবক কতৃক এমদাদ লিটন সিন্ডিকেটের বড় একটি ইয়াবার চালান আত্মসাতের ঘটনায় র্যাব সহ গোয়েন্দা পুলিশের নজরে আসে মাদকের বিশাল এই নেটওয়ার্কটি।
কক্সবাজার কুমিল্লা ঢাকা সহ মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত এই ইয়াবা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের একাধিক সংস্থা নজরদারি ও অনুসন্ধান শুরু করেছে বলেও জানা গেছে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর আটকের পর গা ঢাকা দিয়েছে মাদক পাচারকারী এই সক্রিয় সিন্ডিকেটের অনেকে। নিজেদের ব্যবহৃত ফেন নাম্বার বন্ধ রেখে আত্মগোপনে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মাদক কারবারে ফের সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে তারা।
প্রবাসী ইয়াবা কারবারিদের এই সিন্ডিকেটের সকলকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী প্রবাসী বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর।