ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি শুভ জন্মাষ্টমীতে করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষায় সকল মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। মহামারির কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ এই ধর্মাচার উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করা হয়নি। ভার্চুয়াল পদ্ধতি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা আর্থিক-সামাজিক দুর্বিপাক থেকে উত্তরণের জন্য স্রষ্টার কৃপাদৃষ্টি প্রার্থনা করছেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী প্রাঙ্গণে সোমবার সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় চণ্ডী পাঠ ও গীতাযজ্ঞ শুরু হয়। গীতাযজ্ঞ শুরু হলে মন্দিরে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে জমায়েত হতে থাকেন ভক্তরা। প্রার্থনার বড় অংশজুড়েই করোনাভাইরাস থেকে দেশ ও জাতির মুক্তি চাওয়া হয়। মায়ের সঙ্গে গীতাযজ্ঞে অংশ নিতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসে স্কুল শিক্ষার্থী মনোবীর। ভগবানের কাছে তার প্রার্থনা স্কুল যেন দ্রুত খুলে দেয়। এ সময় কলেজ শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী বলেন, সব ধরনের অন্যায় অসাম্য আগুনে ভষ্ম হয়ে যেন পৃথিবীটা আবার সুন্দর, পবিত্র হয় এটাই আজকের প্রার্থনা।
বিকেলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, সংসদ সদস্য আসীম কুমার উকিল ও দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সামাজিক সখ্যতা ও ঐক্যের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্য দিয়েই সমৃদ্ধির সোপান গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে ঈদ ও পূজায় যেভাবে সর্বজনীন উপস্থিতি বাড়ছে, এটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। দেশের উন্নয়নে যেমন প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, তেমনই প্রয়োজন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক। কিন্তু মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে একটি অশুভ চক্র ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এ দেশের হাজার বছরের ঐতিহ্যে আঘাত হানার অপচেষ্টা করে।
আমরা যখন দেখি, কিছু কিছু জায়গায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং নিন্দিত। এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা ধরা পড়েনি, তাদেরও ধরার চেষ্টা অব্যাহত আছে। করোনা মহামারি মোকাবেলায় তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) জন্মাষ্টমী উপলক্ষে স্বামীবাগ আশ্রমে ছয়দিন দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এছাড়া রাজধানীর স্বামী ভোলানন্দ গিরি আশ্রম, প্রভু জগদবন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, রাধামাধব জিও দেব বিগ্রহ মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, রাধা গোবিন্দ জিও ঠাকুর মন্দির, শিব মন্দির, রামসীতা মন্দির ও মাধব গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন মন্দির, পূজামন্ডপ ও ধর্মীয় সংগঠন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি শুভ জন্মাষ্টমী পালন করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এবার জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা করা হচ্ছে না। এই অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস মহামারী থেকে ‘মুক্তির প্রার্থনা’ ও দেশের কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
হিন্দু পঞ্জিকা মতে, ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হয়ে শ্রীকৃষ্ণ এইদিন জন্ম নিয়েছিলেন মাতা দেবকীর গর্ভে। ছোটোবেলায় তাঁকে সবাই আদর করে গোপাল বলে ডাকত। তাই, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে এইদিন শ্রীকৃষ্ণ বা গোপাল পুজোর আয়োজন করা হয়। তিনি গোবর্ধন পর্বতকে এক আঙুলে তুলেছিলেন বলে তাঁর আর এক নাম গোবর্ধন। কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীকে কৃষ্ণষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিনী, শ্রীকৃষ্ণ জয়ন্তী এবং শ্রী জয়ন্তীও বলা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন কৃষ্ণ ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর। দুষ্টের দমন করে পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি মানুষের রূপ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন।