নিজস্ব প্রতিবেদক:

ওমানে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার এক যুবকের আত্মহত্যা কে পুঁজি করে মিথ্যা মামলা, চাঁদা দাবিতে বিপদে পড়েছেন ৬ ওমান প্রবাসী। এর মধ্যে এক প্রবাসীর ঘরবাড়ি দখল করে নিয়েছে আত্মহত্যাকারী যুবকের পরিবার। আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই মিথ্যা মামলাকে ঘিরে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ৬ প্রবাসীর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে রাশেদের পরিবারের সহযোগিতা কারী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এলাকার একটি দুষ্কৃতী মহল।
আত্মহত্যার ঘটনাকে হত্যার গুজব ছড়িয়ে এবং ওমান রয়েল পুলিশ ও দূতাবাসের ছাড়পত্র কে উপেক্ষা করে দেশের আদালতে হত্যা মামলা দায়েরের মাধ্যমে ৬ প্রবাসী ও তাদের পরিবারের জীবন বিষাদ করে তুলেছেন ওমানে আত্মহত্যা করা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় যুবকের পরিবারের লোভী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।


আর তার ইন্ধন দিচ্ছেন এলাকার কিছু কুচক্রী মহল।
ভুক্তভোগীদের কর্তৃক জানা যায়, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক ইউনিয়নের মিনা গাজীর টিলা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল হকের পুত্র রাশেদ পারিবারিক কলহ ও মানসিক ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে দেশ ছেড়ে ওমানে পাড়ি জমান। সেখানে নিজ এলাকার ৩ জন প্রতিবেশী জাগির, ইকবাল, ও আনোয়ারের সাথে একই বাসায় একই সাথে থাকতেন রাশেদ। নিজ এলাকার মানুষ হিসাবে প্রবাসের শত ব্যস্ততার মাঝেও রাশেদকে তারা আতিথিয়তায় কোনরকম ত্রুটি করেননি। ওমানের থাকাকালে আত্মহত্যাকরি যুবক রাশেদ এলাকার প্রবাসীদের সাথে তার পারিবারিক কলহ ও মানসিক অস্থিরতার কথা শেয়ার করেছেন বিভিন্ন সময়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর এর দিকে তার পরিবারের লোকজনের সাথে টাকা পয়সা সংক্রান্তবিষয়ে সম্পকের্র দন্দ্ব চলছিল যে কারণে রাশেদ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলো, পারিবারিক এসব কলহ থেকে মুক্তি পেতে দেশ ছেড়ে ওমানে চলে যান চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় যুবক রাশেদ। তার পারিবারিক কলহের বিস্ময় সেখানকার প্রবাসীদের বাসায় অবস্থানকালে এলাকার ওমান প্রবাসীদের অনেকবার জানিয়েছিলেন রাশেদ।

ওমানে একই বাসায় থাকা রাশেদের সঙ্গী ৩ প্রবাসি প্রতিদিনের মতো ১৫ নভেম্বর ২০১৫ ইং তারিখে তাদের কর্মস্থলে চলে যায়, সেইসময় রাশেদ বাসায় একা অবস্থান করছিল। রুমমেটরা বাসায় ফিরে রাশেদকে টয়লেটে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে, তাদের চিৎকারে আশেপাশের সবাই ছুটে আসে। পরে পুলিশকে খবর দিলে রাশেদের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় ওমান রয়েল পুলিশ।
ওই সময় রাশেদের ৩ রুমমেটদেরকে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে আটক করে। দুইবার ময়নাতদন্ত শেষে ময়না তদন্ত রিপোর্টে রাশেদের মৃত্যু আত্মহত্যার প্রমাণ মিললে বারকার রয়েল পুলিশ সন্দেহভাজন ৩জন রুমমেটকে ছেড়ে দেয়। ওমান পুলিশ আত্মহত্যার মামলা রুজু করেন, এরপর পরিবার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দূতাবাসের জমা দিয়ে রাশেদের মৃত্যু দেহ দেশে এনে দাফন সম্পন্ন করেন।


এর কিছুদিন পরেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাশেদের বড় ভাই আরিফুল হক রাশেদের রুমমেট তিনজন ছাড়াও আরও তিন প্রবাসীকে জড়িয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে ৬ ওমান প্রবাসীর পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে থাকেন রাশেদের পরিবার। এমনকি মিথ্যে মামলার আসামি করে ঘটনাস্থলে না থাকা প্রবাসী ছালে আহমেদের পরিবারকে মারধর করে বাড়িঘর দখল করে নেয় তারা। রাশেদের পরিবারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের আদালতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই হত্যা মামলার আসামি হিসেবে সালেহ আহমেদকে আসামি করা হয়েছে যদিও ঘটনাস্থল থেকে তিনি ৫শত কিলোমিটার দূরত্বে বসবাস করেন। ভুক্তভোগী সালেহ আহমেদ বলেন, আমাদের ঘরে ফার্নিচার আসবাবপত্র যা কিছু ছিল সন্ত্রাসীরা সব কিছু লুটপাট করে বিক্রি করে দিয়েছে, এমনকি বাড়ির কাজ শেষ হওয়ার পর অবশিষ্ট যে ইট, বালু, সিমেন্ট ছিল তা রাশেদের ছোট ভাই পারভেজ বাহিনীর লোকজন বিক্রি করে দিয়েছে। তার সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মুখে আমার দুই প্রতিবন্ধী নাতি সহ স্ত্রী পরিবারকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

মামলার বাদী পক্ষ প্রবাসীদের পরিবারকে ৩০ লক্ষ টাকা প্রদানের বিনিময় মামলা তুলে নিবেন বিভিন্ন পক্ষের মাধ্যমে এমন কথা বলে প্রবাসীদের পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করেন।
পৃথিবীজুড়ে করোনার মৃত্যুর মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করলে সারা পৃথিবীর স্থবির হয়ে পড়ে, বন্ধ হয়ে যায় মানুষের কর্মক্ষেত্র, ওমানের ৬ প্রবাসীর কর্মক্ষেত্র বন্ধ হওয়ার পরেও মিথ্যে মামলা ও হামলার ভয়ে তারা দেশে আসছে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে দায়ের করা ওই হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী নিজেই জানেন না বিষয়টি এমনকি তিনি রাশেদের মৃতদেহ তিনি দেখেনি বলে দাবি করে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

রাঙ্গুনিয়া এলাকার বেশকিছু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানান, রাশেদ খুবই ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিলো। পরিবারের টাকা পয়সার সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। বিভিন্ন চাপের কারণে তিনি বেশ কিছুদিন ধরে পর্যাপ্ত মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলো। একটি মেয়ের সাথে তার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো দীর্ঘ তিন বছর যাবত। সেই মেয়েটির সাথে তারই ছোট ভাইয়ের বিয়ে করেন বলে তিনি অপমান অপদস্থ হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ছিলেন। ছোট ভাইয়ের সাথে সেই মেয়ের বিয়ের বিষয়টি তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। এসব কারণেই রাশেদ দেশ ছেড়ে ওমানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
সবকিছু মিলিয়ে তার পরিবারের সাথে সম্পর্ক বেশ তিক্ত ছিলো, পারিবারিক কলহ ও পছন্দের মানুষকে হারনোর মানসিক যন্ত্রণার কারণে রাশেদ আত্মহত্যা করতে পারেন বলে রাঙ্গুনিয়ায় এলাকার অনেকেই মনে করেন।

ওমানে আত্মহত্যার ঘটনাকে মিথ্যা মামলায় দাবি করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময় মামলা তুলে নিবে এই প্রস্তাবে রাজি না হলে উক্ত প্রবাসীদের কখনোই দেশে আসতে দেবে না বলে হুমকি প্রদান করে আসছে রাশেদের পরিবার। এই আত্মহত্যা ও মিথ্যা মামলার ঘটনার কারণে ৬ প্রবাসী দীর্ঘ সাত বছর দেশে আসতে পারছেন না।
মিথ্যা মামলায় হয়রানির ঘটনার সুষ্ঠু বিচার আইনের সহায়তা চেয়ে ভুক্তভোগী প্রবাসীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী