প্রজনন মৌসুমে আগামীকাল ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ফলে ফিশিংবোট, ট্রলার, নৌকা ও মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে সাগর ও নদী থেকে ঘরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন জেলেরা।
উপকূলীয় এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে দল বেঁধে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। তীরে নোঙর করে ফিশিংবোট, ট্রলার থেকে ইঞ্জিন, জালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিরাপদ স্থানে রেখে দিচ্ছেন। কোনো কোনো জেলে এসব সরঞ্জাম নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের জন্য ১১ হাজার ১১৮.৮৮ মেট্রিক টন ‘ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ)’ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অবোরধ সফল করতে বারবরের মতো এবারও উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে প্রশাসন ও মৎস্য বিভিাগের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ট্রাস্কফোর্স কমিটি। এই টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরা এক সপ্তাহ আগে থেকেই মৎস্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় ও জেলে পল্লীগুলোতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির বাগেরহাট জেলা সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা এই জেলার সমস্ত জেলে-মহাজন সবসময়েই মেনে চলে। অবরোধের মধ্যে উপকূলীয় অন্যান্য জেলার জেলেরা গোপনে ইলিশ আহরণ করলেও শরণখোলাসহ জেলার কোনো জেলেই ট্রলার নিয়ে সাগরে বা নদ-নদীতে যায় না। তবে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইলিশ কম পাওয়ায় এই জেলার জেলেরা চরম লোকসানে আছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন এই মৎস্যজীবী নেতা।
শরণখোলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব এম এম পারভেজ জানান, ইলিশ অবরোধ সফল করতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অবরোধ বাস্তবায়নে সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব জেলে সাগর বা অন্যান্য নদ-নদীতে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত রয়েছে, তারা নির্দিষ্ট সময়ে ঘাটে ফিরে ৩ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে মাছ বিক্রি ও ট্রলার থেকে জাল তুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ট্রাস্কফোর্স কমিটির সৎস্য সচিব এম এম পারভেজ আরো জানান, শরণখোলায় সমুদ্রগামী ইলিশ আহরণকারী জেলের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। স্থানীয় নদ-নদীতে মৎস্য আহরণকারী জেলে রয়েছে আরো প্রায় তিন হাজার। সব মিলিয়ে উপজেলায় জেলের সংখ্যা ৬ হাজার ৭০০জন। অবরোধ চলাকালীন এসব জেলেদের স্পেশাল ভিজিএফ (২০ কেজি করে চাল) দেওয়ার জন্য মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, ৩৭ জেলার ১৫১টি উপজেলায় মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের মানবিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আওতায় প্রতিটি জেলে পরিবার ২০ কেজি করে চাল পাবে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই এ বছর ভিজিএফ বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত বছরের চেয়ে এবার ২৭ হাজার ৬০২টি বেশি জেলে পরিবার এই বরাদ্দের সুবিধা পাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গতকাল সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে এসংক্রান্ত মঞ্জুরি জ্ঞাপন করেছে। একই সঙ্গে ভিজিএফ চাল পরিবহন ব্যয়ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে মঞ্জুরি জ্ঞাপন করা হয়েছে। ভিজিএফ চাল আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে উত্তোলন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, অবরোধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই বিধিনিষেধ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ১৯৫০ সালের মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, সর্বনিম্ন এক বছর এবং সর্বোচ্চ দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।