আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শান্তি সমাবেশ এবং বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণপরিবহন ভাড়া করে ও আশপাশের অঞ্চল থেকে হেঁটে ঢাকায় আসছেন কর্মীরা। আন্ত জেলা পর্যায়ে চলা ঢাকামুখী বাসগুলোর অর্ধেকের বেশি আগাম ভাড়া হওয়ারও খোঁজ পাওয়া গেছে।

এদিকে এক দিন পিছিয়ে দুই দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি আজ শুক্রবার হওয়ায় রাজধানীর কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমবে। সাধারণত শুক্রবার সড়কে বাস কম চলে।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস আরো কম নামতে পারে। ফলে গণপরিবহনের সংকট তৈরিরও শঙ্কা রয়েছে। তবে এতে তীব্র দুর্ভোগ না-ও হতে পারে। রাজধানীতে পরিবহন মালিকদের বাস চলাচল বন্ধ রাখতে বা সীমিত পরিসরে চালানোর কোনো নির্দেশনা সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।
ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের বাস যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকবে— এ দাবি করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘এখন আর বাসে আগুন দেবে বলে মনে হয় না, তারা ভালো হয়ে গেছে। বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।’

প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, “১০০ বাসের মধ্যে ৬০টি বাসই ‘রিজার্ভ বুকিং’ রয়েছে।

অন্য ৪০টি বাস হয়তো সাধারণ যাত্রী পরিবহন করবে। তবে সমাবেশের জন্যই রিজার্ভ হয়েছে, এটি বলার সুযোগ নেই। আমরা হয়তো অনুমান করতে পারি; কিন্তু নিশ্চিত না। বাসগুলো ট্রাফিক নির্দেশনা অনুযায়ী, দিনে ঢাকার সড়কে ঢুকতে পারবে না। তাই নিরাপদ দূরত্বেই থাকবে।
এদিকে ঢাকায় মহাসমাবেশের আগে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে এরই মধ্যে ঢাকায় অবস্থান করছেন, যেন আজকের মহাসমাবেশে তাঁরা নির্বিঘ্নে যোগ দিতে পারেন। যাঁরা ঢাকায় আসতে পারেননি, তাঁদের অনেকেই বলেছেন যে গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হলে হেঁটেই ঢাকায় যাবেন।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউছুফ খান টিপু বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এসব মাথায় রেখেই আমরা নেতাকর্মীদের ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করতে নির্দেশনা দিয়েছি।’

এদিকে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ বুধবার বিকেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নেতৃত্বে একটি সভা করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল কালের কণ্ঠকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে বিপুলসংখ্যক বাস ও ট্রাকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন।

শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি আজই দেশে ফিরেছি এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছি। ঢাকায় সমাবেশে আমি নিজেই লাখো নেতাকর্মী নিয়ে উপস্থিত থাকব।’

ঢাকায় নিয়মিত প্রায় চার হাজার বাসে যাত্রী পরিবহন করা হয়। রাজনৈতিক বড় কর্মসূচির দিন পরিবহনের কৃত্রিম সংকট তৈরির নজির রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় হওয়া রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনগুলোতে বাস কম চলতে দেখা গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কের মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকেও বাসের দেখা পাননি রাজধানীর কর্মজীবী মানুষেরা। কোথাও সড়ক ছিল অস্বাভাবিক ফাঁকা, কোথাও ছিল তীব্র যানজট। যানজটের কারণে অতিরিক্ত ভাড়ায়ও পাওয়া যাচ্ছিল না বিকল্প পরিবহন। অনেকেই বাধ্য হয়ে হেঁটে পৌঁছেছেন গন্তব্যে।

জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘বিএনপির অতীত কর্মসূচিতে আমরা কিছুটা আতঙ্কিত। কোনো আগুন সন্ত্রাস করা না হলে সব বাস সড়কে চলবে। সমিতির পক্ষ থেকে বাস না চালানোর বা কম বাস নামানোর কোনো নির্দেশনা মালিকদের দেওয়া হয়নি। অন্য জেলা থেকে ঢাকায় আসা বাসের চলাচলও থাকবে স্বাভাবিক।’

তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে সমিতির আরেক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে বড় কম্পানির বাস রিজার্ভ দেওয়া হচ্ছে না। ছোট কম্পানির বাস সমাবেশের আগের রিজার্ভ হচ্ছে। তবে ঢাকায় বাস কম বের হবে। মালিকদের মধ্যে একটা ঝুঁকি থেকেই যায়।’

নরসিংদী থেকে আজ ঢাকায় আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের সমাবেশ ও বিএনপির মহাসমাবেশে অংশ নিতে দুই দলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকায় যেতে ১৫০টি বাস ভাড়া করেছেন। আর গ্রেপ্তার ও হয়রানি এড়াতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাচ্ছেন নিজ উদ্যোগে। এরই মধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে বাস ও ট্রেনে করে বেশির ভাগ নেতাকর্মী ঢাকায় চলে গেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, ‘সব উপজেলা মিলিয়ে অন্তত ১০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় সমাবেশে অংশ নেবেন বলে ধারণা করছি। এ পর্যন্ত সব উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা সরাসরি সমাবেশস্থলে চলে যাবেন। এসব বাসে অন্তত সাড়ে সাত হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আরো দুই-তিন হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন জানান, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রতিটি উপজেলায় তাঁদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ গেছে। সমাবেশে গেলে পরবর্তী সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। গত কয়েক দিনে গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ২৫ জনের বেশি। তাই গ্রেপ্তার ও হয়রানি এড়াতে বাস ভাড়া করে তাঁরা মহাসমাবেশে যাচ্ছেন না। ব্যক্তিগতভাবে ভেঙে ভেঙে নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে অংশ নেবেন।