চলতি বছর জুন থেকে শুরু হওয়া ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলছে। এডিশ মশা নিধনে আগের চেয়ে তৎপরতা বাড়লেও যেন কাজে আসছে না সেই তৎপরতা।
অন্যদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে নগরবাসীর সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা উত্তর করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু রোগীরা। বেশির ভাগ হাসপাতালেই খোলা হয়েছে ডেঙ্গু কর্নার। আজ বুধবারও ঢাকা মেডিকেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গেল ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৬২৬ জন। গেল ২৪ ঘন্টায় শুধু ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৭১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর ছাড়পত্র নিয়েছেন ৭৬৪ জন। ঢাকার বাইরে ভর্তি ৯১৫ আর ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ হাজার ৫৪জন।
গেল জুলাই এবং আগস্ট মাসে রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছিল ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ। প্রতিদিনই আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও মহিলারা এমনটি বলছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল মতিন।
ঢাকা বাহিরে বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর একুশে টেলিভিশনের প্রতিনিধিরা জানান, রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে ২৯৫ জন, খুলনা বিভাগে ১৭৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৯৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫২ জন, রংপুর বিভাগে ৪০ জন এবং সিলেট বিভাগে ১১ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
এ দিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে নেমেছেন সাংস্কৃতিক কর্মীরাও। সিরাজগঞ্জে সন্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট শুরু করেছে সচেতনতামুলক প্রচারাভিযান।
অন্যদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার সমালোচনার মধ্যে ঈদের আগেই এ রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধনে বিদেশ থেকে নতুন ওষুধ আনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সেই ওষুধ নিয়মিত ছিটানোও হচ্ছে ঢাকা শহর জুড়ে। তারপরও কমছে না ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা।
গত জুনে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর ব্যাপকতা বাড়ে জুলাইয়ে, সরকারি হিসাবেই ১৬ হাজার ২৫৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তবে অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি হয়ে ওঠে, ৭ অগাস্ট একদিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪২৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রতিদিনই দুই হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে যান।
এবার ডেঙ্গু জ্বর ব্যাপক আকারে দেখা দেওয়ার পর সিটি করপোরশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ব্যার্থতার কথা ওঠে। মশা নিধনে ওষুধ বদলানোর পাশাপাশি রাজধানীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা নিধনে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই।
তবে আজ বুধবার নগরবাসীর অসহযোগীতার কথা উল্লেখ করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এরপর অসহযোগিতা পেলে সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বাধার আইন প্রয়োগ করা হবে।’ মেয়র আতিক অসহযোগিতার ধরণ বর্ণনা করে বলেন, ‘কোনো কোনো বাড়িতে গিয়ে ৪৫ মিনিট আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অভিযান পরিচালনায় যখন গিয়েছি, লিফটের মেশিন খুলে রাখা হয়েছে। ছাদের চাবি নেই বলা হয়েছে। তাই আমরা অভিযানে গিয়ে সরকারি কর্মচারীদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ১৮৬০ এর দণ্ডবিধির ১৮৩ থেকে ১৮৭, ২৬৯ থেকে ২৭০ এর ধারা প্রয়োগ করব’ বলে জানান তিনি।
এর মধ্যেও নতুন করে মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে থাকায় অগাস্টের ২১ দিনে সারা দেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৫৩৪ জন। আর এ বছর এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৯৯৫ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৭ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তবে বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে একটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।