বিশেষ প্রতিনিধি: মুহাম্মদ রকিবুল হাসান

৯ মে ২০২৪ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কুমিল্লা বুড়িচংয়ের ময়নামতি ঝুমুর গ্রামে চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী দুই পরিবারের সকল সদস্যকে অচেতন করে ৮ লক্ষাধিক নগদ টাকা, আনুমানিক ২০ ভরি স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রীসহ প্রায় ২৮/৩০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ঐ দুই পরিবারের ৩ সদস্য বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে খাবারের সাথে চেতনানাশক বা বিষাক্ত দ্রব্য মিশিয়ে এ এঘটনা ঘটানো হয়েছে। খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে কুমিল্লা বুড়িচং থানাধীন দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে বলে জানা গেছে। এদিকে শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোহেল ভূইয়ার চাচা ওহিদ ভূইয়াকে শুক্রবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে বুড়িচং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউপির ঝুমুর গ্রামের ভুইয়া বাড়ির বাসিন্দা ভুক্তোভেগী ব্যবসায়ী ও ব্রিকস ফিল্ড ম্যানেজার সোহেল ভূইয়া তার স্বজন ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, সোহেল ভূইয়া ও তার চাচা ওহিদ ভূইয়া একই বাড়িতে বসবাস করেন। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সারে ৯টায় বাড়িতে যান তিনি। এসময় সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাথা ঘোরানো সহ শারিরীক সমস্যার কথা জানেন স্ত্রীর কাছ থেকে। পরে তিনি বাড়িতেই রান্না করা রাতের খাবার খান। এরপর থেকে নিজেও একই শারিরীক সমস্যা ভুগতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনিও অচেতন হয়ে পড়েন। ভোরে কিছুটা চেতনা ফিরে পেয়ে ঘরের আলমিরা ও অয়ারড্রব খোলা মালামাল এলোমেলো দেখতে পান। নিজেও ততটা সুস্থ না থাকায় প্রতিবেশী ও স্বজনদের ডেকে বাড়িতে আসতে বলেন।

পরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে এসে তার ও চাচা ওহিদ ভূইয়ার ঘরেও একই অবস্থা দেখতে পান। পরে তৎক্ষনিক অচেতন অবস্থায় দ্রুত পরিবারের সকলকে ক্যান্টনমেন্ট মার্কেট সংলগ্ন ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সোহেল ভূইয়ার স্ত্রী ও ২ সন্তান কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে যায়। এদিকে ঘটনা শুনে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে সোহেল ভূইয়ার শাশুড়ী মেয়ের বাড়িতে আসেন। শুক্রবার দুপুরে মেয়ের রান্না করা একই খাবার খেয়ে তিনিও অচেতন হয়ে পড়লে তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগী পরিবার, স্বজন ও পুলিশের ধারনা বাড়ির কাজের লোক বা পারিবারের সদস্যদের কেউ খাবারে চেতনানাশক বা কোন দ্রব্য মিশিয়ে থাকতে পারে।

ওহিদ ভূইয়ার কণ্যা নিপা আক্তার জানান, ভাই ও চাচাত ভাইদের ফোন পেয়ে বাড়িতে এসে বাড়িতে আসেন তিনি। কিছুদিন আগে ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। ঘটনার সময় ভাবি ভাই কেউ বাড়িতে না থাকায় বাবা একাই বাড়িতে ছিলেন। ঘরে থাকা নগদ আনুমানিক ৮ লক্ষ টাকা ও প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ দুটো মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে অজ্ঞাত চোর। এছাড়া চাচাতো ভাই সোহেল ভূইয়ার ঘর থেকে আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার ও ২টি মেবাইল ফোন নিয়ে যায়।

পরিবারের সদস্যরা জানান ওহিদ ভূইয়ার শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে।

কুমিল্লা বুড়িচং থানাধীন দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) জাবেদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি ও অচেতন থাকায় ভিকটিমটিদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সঠিক পরিমান জানা যায় নি, তবে প্রাথমিক ভাবে কিছু টাকা ও স্বর্ণ গয়না খোয়া গেছে বলে জানেছি।

গত ১১/০৫/২৪ তারিখ রোজ শনিবার রাত দশটার দিকে ভিকটিম ওহিদ ভূইয়ার ছেলে পাকসারুল ইসলাম ভূঁইয়া বাদী হয়ে বুড়িচং থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

কুমিল্লা বুড়িচং থানার ওসি (তদন্ত) ব্যাপারটি সম্পর্কে বলেন – এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। অনুসন্ধানের জন্য অনেক কিছুই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি সমাধানের।

অভিযোগের পর ১২/০৫/২৪ তারিখ রোজ রবিবার দুপুর আনুমানিক ১.৩০ ঘটিকায় ঐ ঘরের কাজের ভুয়া (তানজিনা আক্তার) কে দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই জহির পুলিশ হেফাজতে নেন। এবিষয়ে তদন্ত চলছে।