কুমিল্লা দক্ষিণ প্রতিনিধি : মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন –

কুমিল্লায় কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা।কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মতিনের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগে কুমিল্লার আদালতে মামলা হয়েছে। এছাড়া একটি নিরীহ পরিবারের ক্রয়কৃত সম্পত্তি দখল করতে ওই পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। আবদুল মতিন উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদকের পদে রয়েছেন। উপজেলা সদরের দিশাবন্দ গ্রামের মৃত আলী আজ্জমের ছেলে ছালেহ আহমেদের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলাটি গতকাল থেকে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার সদস্যরা। এদিকে, এর আগে গত ১৬ জুলাই কুমিল্লার আদালতে ছালেহ আহমেদ বাদী হয়ে অধ্যক্ষ আবদুল মতিনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। ওইদিন আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই কুমিল্লাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার বাদী ছালেহ আহমেদ বলেন, মনোহরগঞ্জ কলেজের পাশে আমাদের ক্রয়কৃত ৩৩ শতক সম্পত্তি রয়েছে। অধ্যক্ষ আবদুল মতিন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গত রমজানে আমাদের সম্পত্তিতে আমরা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে আবদুল মতিন তার লোকজন নিয়ে প্রথমে বাধা দেয়। এরপর আমার বড় ভাই তোফায়েলের সঙ্গে ঝালেমা শুরু করে এবং পরে হয়রানির উদ্দেশ্যে আমাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ওই সময় থেকে আবদুল মতিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েও পুরো সম্পত্তি দখল করতে না পেরে প্রথমে আমাকে বলে তার নামে ৬ শতক সম্পত্তি লিখে দিতে। কিন্তু আমি এতে রাজি না হলে মতিন আমাকে সরাসরি বলে সম্পত্তিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হলে তাকে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে। ছালেহ আহমেদ আরো বলেন, আমাদের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজের জন্য কিছু রড মনোহরগঞ্জ স্কুল মাঠের এক পাশে আমাদের সম্পত্তির কাছেই রেখেছিলাম। আবদুল মতিনের এসব প্রস্তাবে আমি রাজি না হওয়াতে সে প্রশাসনকে ভিন্নখাতে প্ররোচিত করে বিদ্যালয় মাঠের ভিতরে রড রাখার কারনে আমাকে কথা বলবে বলে ডেকে নিয়ে গত ২৭ জুন উপজেলা এসিল্যান্ডের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১৫ দিনের কারাদন্ড দেওয়ায় আমাকে। কিন্তু এর আগে আমাকে মৌখিক কিংবা লিখিত কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি রডগুলো সরানোর জন্য। আমাকে কারাদন্ড দিয়ে মাঠে থাকা আমার প্রায় ৩ লক্ষ টাকার রডগুলোও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এসিল্যান্ডের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করায় মতিন। ছালেহ আহমেদের অভিযোগ, ৬ শতক সম্পত্তি আবদুল মতিনের নামে লিখে না দেওয়া এবং পরবর্তীতে দাবিকৃত ৫লক্ষ টাকা চাঁদা না দেওয়ার অপরাধেরই তাদের পরিবারকে এভাবে একের পর এক হয়রানি করে চলেছে অধ্যক্ষ মতিন। মতিন আগে সরাসরি বিএনপির রাজনীতি করতো, কয়েক বছর আগের আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলীয় ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। মূল কথা হলো যখন সেই সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই সরকার দলীয় এমপির চাটুকারিতা করেই একের পর এক অপকর্ম করে রেড়ায় মতিন। গত বছরও তার বিরুদ্ধে মনোহরগঞ্জ কলেজে ২৬ প্রচার দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। দলীয় পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে সেখান থেকেও রেহায় পায় সে। আর তার স্ত্রী রাবেয়া আক্তার লিপি এসব কাজে তাকে সরাসরি সহযোগীতা করে, মামলায় তাকেও আসামী করা হয়েছে। এদিকে, এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে অধ্যক্ষ আবদুল মতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তিনি বলে উঠেন, আমি অসুস্থ, এসব ব্যাপারে এখন কথা বলতে পারবো না। আপনি প্রয়োজনে আমার আইনজীবির সাথে কথা বলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো.আমান উল্লাহ বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত শুরু করেছি। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনোহরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লা বলেন, আমার কাছে এখনো এমন কোন অভিযোগের কপি আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।