উচ্চকণ্ঠ ডেস্কঃ
শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা সংশোধন করছে সরকার। সংশোধন প্রস্তাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ সদস্যের কমিটি গঠনের বিধান রাখা হচ্ছে। ওই কমিটি কোচিং বাণিজ্য নজরদারি করে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে। এদিকে, এই সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধনের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খানকে প্রধান করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানতে চাইলে নীতিমালা সংশোধনে গঠিত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশের পর নীতিমালা সংশোধনের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। ছোটখাটো ভুল থাকলে তা সংশোধনসহ স্কুল-পর্যায়ে একটি কমিটি রাখার বিষয় যুক্ত করার সুপারিশ করা হবে।’
কোচিং বাণিজ্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব সালমা জাহান বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে হবে। ২০১২ সালের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ সংক্রান্ত নীতিমালায় বিভিন্ন কমিটি থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কোনও কমিটি নেই। সে কারণে কোচিংবাণিজ্যে কোনও শিক্ষক প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন কিনা, তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এর দায় নিতে হবে। কমিটি কোচিং বাণিজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবে। প্রয়োজন হলে ব্যবস্থাও নেবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতেরর (মাউশি পরিচালক, মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোচিংবণিজ্য বন্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কমিটি গঠন করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। কমিটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির প্রধানকে সভাপতি করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করার সুপাশি করা হবে। কমিটিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান ছাড়াও একজন শিক্ষক প্রতিনিধি, একজন শিক্ষক ও একজন অভিভাবক প্রতিনিধি রাখার সুপারিশ থাকবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ছয় বছর পর ২০১৮ সালের নীতিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। তবে, নীতিমালার গেজেট প্রকাশের পরও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হয়নি। নীতিমালায় কোচিং বাণিজ্য বন্ধে কমিটি থাকলেও তা কার্যত বাস্তবায়ন করা যায়নি।
গত রবিবার (২৫ আগস্ট) কোচিং বাণিজ্য বন্ধ সংক্রান্ত নীতিমালা বাস্তবায়ন নিয়ে প্রথম বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ওই বৈঠকে কোচিং নীতিমালা পর্যালোচনা করে তা বাস্তবায়ন করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কমিটি রাখার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। তার নির্দেশের পর নীতিমালা সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটি বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রথম বৈঠক করে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের নীতিমালায় কোচিং ও কোচিং বাণিজ্য আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়।
কোচিং বলতে বোঝানো হয়েছে—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলার সময় শিক্ষককের নির্ধারিত ক্লাসের বাইরে বা এর আগে-পরে শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে কোনও স্থানে পাঠদান করা। আর কোচিং বাণিজ্য বলতে বোঝানে হয়েছে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি পোস্টার, লিফলেট, ফেস্টুন, ব্যানার, দেয়াল লিখন অথবা কোনও প্রচারণার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে কোচিং কার্যক্রম পরিচালনা করাই কোচিং বাণিজ্য।
প্রাইভেট টিউশনি বলতে শিক্ষকের নিজের বাসায় কিংবা শিক্ষার্থীর বাসায় পাঠদানকেই বোঝানো হয়েছে।
কোচিং ও কোচিং বাণিজ্য সংক্রান্ত ২০১২ সালের নীতিমালায় বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলার সময় কোনও শিক্ষক কোচিং করাতে পারবেন না। তবে, আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে শুধু অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
কোনও শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে দৈনিক বা প্রতিদিন অন্য কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমিত সংখ্যক ১০ জনের বেশি নয়। শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে লিখিতভাবে ছাত্র-ছাত্রীর তালিকা (রোল নম্বরসহ) জানাতে হবে।
কোনও শিক্ষক বাণিজ্যিকভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোনও কোচিং সেন্টারে নিজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারবেন না। নিজে কোনও কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারবেন না বা কোচিং সেন্টার গড়ে তুলতে পারবেন না।
কোনও শিক্ষার্থীকে কোচিংয়ের জন্য কোনও শিক্ষক নিজ নামে ফোন বা কোচিং সেন্টারের নামে কোনও রকম প্রচারণা চালাতে পারবেন না। কোচিং সেন্টারের নামে বাসাভাড়া নিয়ে কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা করা যাবে না।
২০১২ সালের নীতিমালায় কোচিং বন্ধ করতে মেট্রোপলিটন শহর বা বিভাগীয় পর্যায়ে একটি, জেলা শহরের জন্য একটি এবং উপজেলা বা স্থায়ী পর্যায়ের জন্য একটি কমিটি করার কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনও পদক্ষেপ নেই। এই কারণেই স্কুলপর্যায়ে কমিটি করতে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান নীতিমালা সংশোধনে গঠিত কমিটির প্রধান নাজমুল হক খান।