সংগঠনের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে ছাত্রদলের কাউন্সিলে যারা ভোট দেবেন হঠাৎ করেই তাদের সই নিয়েছে বিএনপি। এতে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, কাউন্সিল বাদ দিয়ে সিলেকশন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের জন্য কিছু না জানিয়েই কাউন্সিলরদের সই সংগ্রহ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কাউন্সিলরদের ডেকে সই সংগ্রহ করা হয়।
ছাত্রদলের একাধিক কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী আমাদের সই সংগ্রহ করেন। কিন্তু কেন আমাদের সই সংগ্রহ করছেন সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আমাদের বলা হচ্ছে না।
তবে নয়াপল্টন সূত্র মতে, ছাত্রদলের কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দায়িত্ব দিয়েছেন কাউন্সিলররা। এখন কমিটি গঠন নিয়ে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মর্মে তাদের সই সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দুপুরে কাউন্সিলরদের সঙ্গে তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপে বৈঠকও করেছেন।
কাউন্সিলরদের সই সংগ্রহ প্রসঙ্গে আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের সই সংগ্রহ করবো কেন? কাউন্সিলররা বৈঠক করেছেন, তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা বৈঠকে উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়েছেন।’
ওই বৈঠকে কমিটি গঠনের বিষয়ে কাউন্সিলররা তারেক রহমানকে বলেছেন, আপনার ওপর দায়িত্ব অর্পন করছে কাউন্সিলররা। কমিটির বিষয়ে যেটা ভালো হয়, আপনি সে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে এসব বিষয় ছাত্রদলের প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রার্থী বলেন, এই পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেটের হোতারা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন। তারা চাইছেন ইলেকশন প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন না করে সিলেকশন প্রক্রিয়া সিন্ডিকেটের প্রার্থীদের দিয়ে কমিটি গঠনের।
তাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য, তার অনুসারী ছাত্রদলের সাবেক একজন সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক দুজন সভাপতি রয়েছেন।
এদিকে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে ডাকা হলেও বৈঠক হয়নি বলেও অভিযোগ তাদের।
কাউন্সিলরদের সই সংগ্রহ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে আমার জানা নেই, জানলে পরবর্তীতে জানানো হবে।’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ২৭ বছর পর গত শনিবার ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিলুপ্ত কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. আমানউল্লাহ গত বৃহস্পতিবার মামলা করলে এতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ফলে স্থগিত হয় ছাত্রদলের কাউন্সিল। আদালতের নিষেধাজ্ঞায় আটকে যাওয়া ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দুটি পন্থা ছিল। এর একটি হলো- বিলুপ্ত কমিটি আবার সক্রিয় করা আর দ্বিতীয়টি হলো- সারা দেশের কাউন্সিলররা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
এর আগে গত ১৫ জুলাই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ২০০০ সালের আগে যারা এসএসসি পাস করেছে তারা কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারবেন না। বয়সের এমন বাধ্যবাধকতার কারণে সে সময় ছাত্রদলের সদ্য সাবেক নেতারা চরম ক্ষুব্ধ হন; যা নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে, ছাত্রদলে দেখা দেয় সংকট। যার কারণে ওই নির্ধারিত তারিখে কাউন্সিল হয়নি সংগঠনটির।