শুরুর আগে সমালোচকরা বেশ কিছু কটুক্তি করেছেন। কিছু ফোরনও কেটেছেন। আমিনুল ইসলাম বিপ্লব আগে ব্যাটসম্যান, পরে লেগস্পিনার। সেটাও খুব বড় মাপের কিছু না। ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা এইচপি-ইমার্জি দলের হয়ে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আহামরি কোন পারফরমেন্সও নেই।

কাজেই লেগস্পিনার হিসেবে বিপ্লবের ভবিষ্যত নিয়ে রীতিমত সংশয় প্রকাশ করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু সব সংশয় আর সমালোচকদের বাঁকা কথাবার্তাকে ‘বুড়ো আঙ্গুল’ দেখিয়ে প্রথম পরীক্ষায় উৎরে গেছেন সাফল্যের সঙ্গেই।

মূলত ব্যাটসম্যান কাম লেগস্পিনার হলেও লাল সবুজ জার্সি গায়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিশেষজ্ঞ লেগস্পিনার হিসেবেই যাত্রা শুরু হয়েছে বিপ্লবের। নিজের প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ১৮ রানের বিনিময়ে দুই উইকেট শিকার করে সবার প্রশংসাই কুড়িয়েছেন শরীয়তপুরের এ ২০ বছর বয়সী ক্রিকেটার।

কিন্তু হায়! এ সম্ভাবনাময় লেগস্পিনার সম্ভবত আফগানিস্তানের বিপক্ষে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) খেলতে পারবেন না। গুজব, গুঞ্জন নয়। হাওয়া থেকে পাওয়া উড়ো খবরও না। একদম প্রধান প্রধান নির্বাচকের নিজের মুখের কথা।

বুধবার রাতে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ফিল্ডিংয়ের সময় ব্যথা পেয়েছেন বিপ্লব। সেই ইনজুরির কারণে আফগানিস্তানের সঙ্গে ফিরতি পর্বে মাঠে নামার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়। এমনকি আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শেরে বাংলায় ফাইনাল খেলার সম্ভাবনাও কম।

উল্লেখ্য, আগের রাতে (বুধবার) নিজ বোলিংয়ের সময় জিম্বাবুয়ান অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজার জোরালো স্ট্রেইট ড্রাইভ মাটিতে ঝাপিয়ে থামাতে গিয়ে বাঁ হাতের আঙুলে ব্যাথা পেয়েছেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। সেই ব্যথা পাওয়া জায়গায় তিনটি সেলাইও দিতে হয়েছে।

যদিও যে হাতে বোলিং করেন, সেই হাতের আঙুল বা তালুতে নয়। তবুও বাঁহাতের আঙ্গুল ও তালুসহ সেলাই করা, তাই ঐ ক্ষত জায়গা না শুকানো পর্যন্ত খেলা কঠিন।

সে কারণেই প্রধান নির্বাচক জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ‘যেখানে বল লেগেছে, ঠিক সেখানে আগেও ব্যথা ছিল, ইনজুরি ছিল। তাই মাসাকাদজার শটে ব্যথা পেয়েছে দ্বিগুণ।’

প্রধান নির্বাচক আরও জানান, ‘সত্যিকার অবস্থা কী? তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সেটা ডাক্তারের রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে। এখনো চিকিৎসকদের চূড়ান্ত রিপোর্ট আসেনি। আমরা তার অপেক্ষায় আছি। তবে এরকম থাকলেও বিপ্লবের পক্ষে ২১ তারিখের ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা খুব কম। আর ইনজুরি ভালোর দিকে থাকলে হয়তো ২৪ সেপ্টেম্বর শেরে বাংলায় ফাইনাল খেলতে পারে।’

একই ইস্যুতে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক ডাঃ দেবাশীষ চৌধুরী জানান, ‘আসলে এই জায়গায় ওর আগেও ব্যথা ছিল। তাই সমস্যা হচ্ছে একটু বেশি। বুধবার রাত ১২ টায় চট্টগ্রামে এক ক্লিনিকে তার আঙুলে তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। এরকম অবস্থায় আমরা এক সপ্তাহ পর সেলাই কাঁটি। সে আলোকে ২৪ সেপ্টেম্বরের পর ২৫ সেপ্টেম্বর নাগাদ হয়ত সেলাই কাটঁতে হবে।’

কিন্তু তার আগে ২১ ও ২৩ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের সঙ্গে রবিন লিগের ফিরতি পর্ব আর ফাইনাল ম্যাচ আছে। তার পক্ষে কি তাহলে খেলা সম্ভব হবে?

এ প্রশ্নের জবাবে দেবাশীষ চৌধুরী জানান, ‘এরকম ইনজুরিতে হাত, তালুতে বা আঙুলে সেলাই দিতে হলে অন্তত এক সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হয়। আমরা এক সপ্তাহের আগে সেলাইও কাটি না। তবে এক্ষেত্রে যদি তাকে তার আগে খেলানোর পরিকল্পনা থাকে, তখন আমরা ব্যবস্থা করে দেই। ক্ষতস্থানটা যতটা সম্ভব নিরাপদ রেখে ভারী ব্যান্ডেজ পেচিয়ে দেয়া হয়। যাতে বল ও অন্য কিছুর আঘাত না লাগে। এখন টিম ম্যানেজমেন্ট ও দল চাইলে আমরা চেষ্টা করবো তার আঙুলকে যতটা সম্ভব নিরাপদ রেখে মাঠে নামাতে।’

তাই বিপ্লব পুরো তিন জাতি আসরেই আর খেলতে পারবেন না- এমন কথা কিন্তু জোর দিয়ে বলার সুযোগ নেই। বরং ঘা শুকালে হয়তো ফাইনালে ঠিক মাঠে নামবেন। তখন নানা রকম ব্যান্ডেজ হাতে লাগানো থাকবে হাতে।