চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর অনুপস্থিতিতেই সংগঠনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠক করল যুবলীগ। গতকাল শুক্রবার সকালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। এতে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ এবং ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিষয়ে আলোচনা হয়। নেতাদের নানা অনৈতিক কর্মকা-ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে এখনই কঠোর হওয়ার দাবি জানান প্রেসিডিয়াম সদস্যরা।

যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। চেয়ারম্যান উপস্থিত না হলেও তার সিদ্ধান্তেই বৈঠকটি হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। তবে দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য আমাদের সময়কে জানান, চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সম্মতি ছাড়াই আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশে বৈঠকটি হয়। এর আগে কখনো চেয়ারম্যানকে ছাড়া যুবলীগের প্রেসিডিয়াম বৈঠক হয়নি।

বৈঠকে শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর যুবলীগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকার যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, কাজী আনিস, এনামুল হক আরমান, খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া, মমিনুল হক সাঈদসহ ক্যাসিনোকা-ে যুবলীগের যেসব নেতার নাম এসেছে তাদের নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, কিছু নেতার কর্মকা- সংগঠনের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ করেছে। এভাবে আর সংগঠন চলতে দেওয়া যায় না। এখনই এসব কর্মকা- প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করারও দাবি ওঠে বৈঠক থেকে। আরও যেসব নেতা ক্যাসিনোসহ অনিয়ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে জড়িত তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি তোলেন একাধিক নেতা।

যুবলীগের একাধিক নেতা জানান, গত বুধবার গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের প্রেসিডিয়ামের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার সাধারণ সম্পাদক এসএমএসের মাধ্যমে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর আপত্তির কারণে বৈঠকটি শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়।

বুধবারের বৈঠকের বিষয়ে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেছিলেন, মঙ্গলবার সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বৈঠকের বিষয়ে আমাদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে বৈঠক স্থগিত করার কথা আমাদের জানানো হয়। সূত্র জানায়, নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে কোনো বৈঠক করতে চাচ্ছিলেন না ওমর ফারুক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার সম্মতি ছাড়াই বৈঠক হয়।

যদিও গতকাল বৈঠক শেষে প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দিপু সাংবাদিকদের বলেন, সভা ডাকার অনুমতি চেয়ারম্যান দিয়েছেন। তার নির্দেশেই সভা হয়েছে। তবে তিনি কেন আসেননি এ ব্যাপারে তিনিই ভালো বলতে পারবেন। হয়তো অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। উনি কোথায় আছেন আমরা কেউ জানি না।

ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগ চেয়ারম্যান পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে দিপু বলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান পদের বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। আর যাদের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়েও তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যুবলীগের আসন্ন কেন্দ্রীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব কে করবেনÑ জানতে চাইলে আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেন বলেন, এ দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। উনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে। একই প্রশ্ন করা হলে সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

গতকালের বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন শহিদ সেরনিয়াবাত, শেখ শামসুল আবেদীন, আলতাব হোসেন বাচ্চু, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মো. আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, আনোয়ারুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, শাহজাহান ভুইয়া মাখন, ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু।

২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে এই কংগ্রেসে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে যুবলীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হন।