ফেসবুকে ‘৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের নামের ফেসবুক পেজের এক লেখাকে কেন্দ্র করে মারধরের শিকার হয়েছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এতে আহত সাত নেতাকর্মী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
গতকাল রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মের সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা মারধরের ঘটনা শুরু করলে মধুর ক্যান্টিনে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।
আহত নেতাকর্মীরা হলেন ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মামুন খান, জিয়া হলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাজাহান শাওন, তারেক হাসান মামুন, সহ-মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম রুম্মন, সহ-নাট্যবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মাজেদ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল্লাহ নাঈম ও সূর্যসেন হলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহফুজুর রহমান চৌধুরী। এ ছাড়া ছাত্রদল প্যানেল থেকে ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক কানেতা ইয়া লাম লাম, শামসুন্নাহার হলের মানসুরা আলমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ছাত্রদল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বায়োতে ‘৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে ওঠুক আরেকবার’ লেখাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তোলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করে ছাত্রদল। অন্যদিকে মধুর ক্যান্টিনে শ্যামলের লেখার প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। মধুর ক্যান্টিনের সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের শেষের দিকে ছাত্রদলের একটি অংশ মধুর ক্যান্টিনে গেলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি ও ছাত্রলীগের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদের নেতৃত্বে ছাত্রদলের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিন থেকে পালাতে চেষ্টা করলে আইবিএ ভবন, কলাভবনের সামনে তাঁদের মারধর করা হয়। এ সময় মধুর ক্যান্টিনে উপস্থিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলমসহ অন্য নেতাকর্মীরাও হামলায় অংশ নেন। এতে ছাত্রদলের সাত নেতাকর্মীসহ দুজন নারীকর্মী লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে দাবি করে ছাত্রদল।
এদিকে ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইকবাল হোসেন শ্যামল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার ও ছাত্রদলের সভাপতির কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। এই মর্মে আমরা কয়েক সপ্তাহ আগে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। এর পরও ছাত্রলীগের অতি উৎসাহী কিছু নেতা ফেসবুক আইডি হ্যাক করে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
পরবর্তী সময়ে হামলার বিষয়ে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ফেসবুক পোস্ট নিয়ে গুজব রটিয়ে তারা হামলা করেছে। প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন হামলার বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মধুর ক্যান্টিনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন চলছিল। ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক পোস্টের প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। ঠিক সেই সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিয়ে সেখানে এসে মেঝেতে বসে পড়েন। এ সময় চেয়ার টানাটানি করছিল। তাই আমাদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’
হামলার বিষয়ে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ কোনো ধরনের হামলা চালায়নি। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। হামলার সময় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন চলছিল। তারাই হামলা করে থাকতে পারে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’