ভোলার বোরহানউদ্দিনে এক হিন্দু তরুণের ফেসবুক আইডি থেকে ধর্মকে ‘কটাক্ষ’ করে বক্তব্য ছড়ানোর পর সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক।

তিনি বলেন, ‘গতকালের (রোববার) ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, বিশৃঙ্খলার অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় চার থেকে পাঁচ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে সেখানে।’

বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামে ওই তরুণের ফেসবুক আইড হ্যাক করে এ ধরনের বক্তব্য ছড়ানো হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এ ঘটনায় শুভ একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। বর্তমানে বোরহানউদ্দিন উপজেলার পাশাপাশি পুরো জেলাতেই থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সভা সমাবেশ বা মিছিল করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে চার ব্যক্তি নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে ‘মুসলিম ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে আজ সোমবার যে সমাবেশ ডাকা হয়েছিল, অনুমতি না পাওয়ায় তা হচ্ছে না। আয়োজকদের অন্যতম নেতা মাওলানা মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ভোলা প্রেসক্লাবে তাদের সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।

রোববার দুপুরে ওই সংঘর্ষের পর আশপাশের জেলা থেকে বাড়তি পুলিশ আনা হয়েছে ভোলায়। বোরহানউদ্দিনে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। বোরহানউদ্দিনে পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি কোস্টগার্ড সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন বলে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেছেন, ‘কেউ যেন প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সভা সমাবেশ বা মিছিল না করে, সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’

এদিকে, গতকাল হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনার পর থেকেই বোরহারউদ্দিনসহ জেলা শহরে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়। পাশের জেলা থেকে অতিরিক্ত দুইশর বেশি পুলিশকে ভোলায় এনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

ধর্মকে ‘কটাক্ষ’ করে বক্তব্য ছড়ানোর পর গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বোরহানউদ্দিন হাই স্কুল মাঠে পূর্বঘোষিত ‘তৌহিদি জনতা’র একটি সমাবেশে এ পুলিশ-জনতার সংঘর্ষে চার জন নিহত হন। নিহতরা হলেন, মাহফুজুর রহমান পাটোয়ারী (২৩), মিজান (৩০), মাহবুর রহমান (৩০) ও শাহিন (২৫)। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পুরো পরিচয় জানা যায়নি। তবে আহতদের নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আল্লাহ ও হজরত মুহাম্মদ (সা.-কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে ‌বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামে এক ব্যক্তির বিচারের দাবিতে আজ ঈদগাহ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ‘তৌহিদী জনতা’। এ সমাবেশের জন্য পুলিশ অনুমতি দেওয়ার আগেই তারা মাইকিং করে। পরে সমাবেশের জন্য পুলিশ অনুমতি না দিলেও সকাল নয়টা থেকে লোকজন মাঠে জড়ো হতে থাকে। মিছিল করতে না পেরে সেখানেই অবস্থান শুরু করেন আয়োজকেরা। পরে পুলিশ ‘বাটামারা পীর সাহেব’ মাওলানা মহিবুল্লাহকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং তাকে ঈদগাহ জামে মসজিদের দোতলায় নিয়ে যান। ওই সময় গুঞ্জন ওঠে, মাওলানা মহিবুল্লাহকে পুলিশ আটক করেছে। এ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুড়লে চারজন নিহত হন।

পুলিশের দাবি, উত্তেজিত লোকজন পুলিশের ওপর হামলা শুরু করলে তারা গুলি করতে বাধ্য হয়।

অভিযোগ উঠেছে, গত শুক্রবার বিকেলে বিপ্লব চন্দ্র শুভর নিজের ছবি সংবলিত ফেসবুক আইডি থেকে আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)–কে গালাগাল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুর কাছে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। যাদের ম্যাসেজে পাঠানো হয় তারা ম্যাসেজটি স্ক্রিনশট নিয়ে ফেসবুকে দিলে লোকজন প্রতিবাদ জানানো শুরু করে। এ নিয়ে বিভিন্ন মসজিদ থেকে কয়েক দফায় বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়। এরই ফলশ্রুতিতে ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।