শুধু চালকদের দোষারোপ নয়, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য পথচারীরাও দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে যে অ্যাক্সিডেন্ট হলে ড্রাইভারকে দোষারোপ করে। আমাদের ড্রাইভারদেরও দোষ আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড় কথা যথেষ্ট ট্রেনিংপ্রাপ্ত না তারা এবং ট্রেনিং তাদের দেওয়া হয় না, এটা একটা ব্যাপার। কিন্তু আমি শুধু ড্রাইভারদেরকেই দোষারাপ করব না। আমাদের যারা পথচারী- এই অ্যাক্সিডেন্ট ঘটানোর জন্য তারাও কিন্তু অনেকটাই দায়ী। তারা দায়ী এই কারণে যে, যেটা আমরা নিজেরাই দেখেছি। আপনারা দেখেছেন যে আমরা ফুটওভার ব্রিজ করে দিচ্ছি, আন্ডারপাস করে দিচ্ছি। সড়কের সাথে সাথে ফুটপাথও আছে, তারপরও দেখা যায় কেউ কোনো নিয়ম-কানুন মানেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন একটা চলন্ত গাড়ি যখন আসে তার সামনে দিয়ে শুধু হাত দেখিয়ে দৌঁড় মারলে এটি তো একটি যন্ত্র, যান্ত্রিক, ব্রেক কষলেও তো বেশকিছু সময় লাগে সেটা থামতে। সেই বোধটা আমাদের জাতির থাকতে হবে। পথচারী যারা- পথচারীদের তো এই বোধটা থাকতে হবে, এই জ্ঞানটা থাকতে হবে। আর সেই সাথে সাথে সড়কের কিছু আইন আছে যেটা মেনে চলতে হয়। কিন্তু সে সম্পর্কে আসলে সচেতনতাও সৃষ্টি করা হয়। এটাও একটা সমস্যা, সে জন্য আমরা এখন থেকে স্কুল-কলেজ, অফিস যেখানে অনেক মানুষ কাজ করে সেখানে সচেতনতা সৃষ্টি একান্তভাবে প্রয়োজন। তা তার জানা থাকতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে কিন্তু নিজের গাড়ি নিজে চালায় খুব কম ড্রাইভার। এই ড্রাইভার কতক্ষণ গাড়ি চালালো? ড্রাইভার খেলো কিনা, ড্রাইভারের পর্যাপ্ত বিশ্রাম আছে কিনা আমাদের যারা গাড়ির মালিক যারা ড্রাইভারকে ব্যবহার করেন তারা কখনও এই বিষয়টা চিন্তা করেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। খুব কম লোকই আছে চিন্তা করেন। কারণ আমরা অনেক সময় দেখি যে ঢাকা থেকে তিনি চলে যাচ্ছেন গ্রামের কোনো একটি জায়গায় বা তার নিজের বাড়িতে, আবারও ওই দিনই ফিরে আসতে হবে। তিনি কি একবার ভেবেছেন যে ড্রাইভার তো একজনই। আর গাড়ি চালানোটা… যে কখনও গাড়ি চালায়নি তারা বুঝবে না যতক্ষণ স্টিয়ারিং হাতে থাকে মাথা কত চিন্তাযুক্ত কত টেনশনে থাকে। যদি কেউ গাড়ি চালিয়ে থাকেন সে বুঝবে আর যে জীবনও চালায়নি সে বুঝবে না। এটা হলো বাস্তবতা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে ড্রাইভার তার কিন্তু খাবারের দরকার আছে, বিশ্রামের দরকার আছে, সময়ের দরকার আছে সে কথা আমাদের মালিক ও যাত্রী, আমি জানিনা কেউ এটা উপলব্ধি করে কিনা। আর এর ফলে ড্রাইভার যখন বেশি সময় ধরে গাড়ি চালায় তখন একটা ঝিঁমুনি আসে, তখনই তো একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় বলব- ড্রাইভার যখন বাস চালায়, কত ঘণ্টা সে চালাতে পারে? সে যখন বিশ্রামে যায় হেলপারের হাতে বাস দিয়ে যায়। হেলপার যে সে তো সচেতন না বা চালাতে পারে না বা তার তো লাইসেন্সও নাই কিছুই নাই।’
সভায় সড়ক খাতে আওয়ামী সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘৯ হাজার ১ শত ২১ কিলোমিটার সড়ক ওভারঅলকরণ, ১ হাজার ৬৮টি সেতু নির্মাণ,৪ হাজার ৬ শত ৫৬ টি কালভার্ট নির্মাণ বা পুণঃনির্মাণে করেছি। প্রায় ৪৬.৪০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক আমরা চার লেনে উন্নীত করেছি। এবং ৩৮৭ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক আমরা ছয় লেনে উন্নীত করেছি। আর এ যাত্রাবাড়ি-কাঁচপুর রাস্তাটা, যেটা সিলেট এবং নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে যেতে পারে সেটা আমরা আট লেনে উন্নীত করে দিয়েছে। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ৫২ হাজার ৩শ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ণ, ৭৫ হাজার ৭৮০ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ ৩১ হাজার ৬৩৭ মিটার ব্রিজ পুনঃনির্মাণ, ৩ লাখ ১ হাজার ৩৪১ মিটার কালভার্ট নির্মাণ এবং ৮২টি সেতু নির্মাণের কাজ এখনো চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে বড় বড় সেতুগুলি নির্মাণ এবং যমুনা সেতুতে রেল সংযোগ করেছি। পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করছি, সেখানেও রেল এবং মাল্টিপারপাস হচ্ছে। রেলের সাথে গ্যাস, বিদ্যুৎ লাইন সেগুলোও আমরা করে দিচ্ছি। এভাবে সড়ক যোগাযোগের উপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি এবং যার ফলে আজ আমাদের উন্নয়নটাও ত্বরান্বিত হচ্ছে। দেশের সার্বিক মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। মানুষেরও যোগাযোগ বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে সহজ হচ্ছে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্ততে বিরাট অবদান রেখেছে। তা ছাড়া ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়ে যাচ্ছে।’