‘সুপার সেভেন’ দিয়ে মেয়াদ পার করলো জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যর্থ হলেও শিগগিরই পূর্ণাঙ্গতা পেতে যাচ্ছে বিএনপির অঙ্গসংগঠনটির কমিটি। এতে সভাপতির অনুসারীরা প্রাধান্য পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি, আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক ও ইয়াসিন আলীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটি গঠনের এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনেরও নির্দেশনা দেয়া হয়।

শফিউল বারী বাবু স্বেচ্ছাসেবক দলের গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। জুয়েল ছিলেন ছাত্রদলের সভাপতি আর ইয়াসিন আলী স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ছিলেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সুপার সেভেন কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও সাদরাজ্জামানকে মনোনীত করা হয়।

তিন বছর মেয়াদের এ কমিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গতা না পেলেও মেয়াদ শেষে এটি হতে চলেছে। এক্ষেত্রে কমিটির মেয়াদ হবে মাত্র তিন মাস।

স্বেচ্ছাসেবক দলের গত কমিটির দফতরের দায়িত্বে থাকা এক নেতা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের মধ্যে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের গত কমিটি ঈর্ষণীয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সভাপতি-সম্পাদকের বিরোধে এবার তা সুপার-ডুপার ফ্লপ করেছে। কমিটি সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থ হওয়ায় রাজপথসহ অন্যান্য কার্যক্রমে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এখন তিন মাসের জন্য কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে। আগামীতে সিলেকশন হবে না ইলেকশনের (কাউন্সিল) মাধ্যমে কমিটি গঠন হবে, এ কারণে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য নিজেদের অনুসারীদের কমিটিতে ঢোকানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বাবু তার অনুসারী ও আত্মীয়-স্বজনদের কমিটিতে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। সাধারণ সম্পাদকের তুলনায় এ প্রতিযোগিতায় বাবু এগিয়ে রয়েছেন। কারণ তিনি গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আর জুয়েল ছাত্রদল থেকে এসেছেন। স্বাভাবিকভাবে বাবুর সঙ্গে জুয়েলের পারার কথা নয়। ফলে তিন মাস মেয়াদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বাবুর অনুসারীরা বেশি থাকবেন।’

আগামী কাউন্সিলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রার্থী হতে চান এমন এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের গত কমিটি, মহানগর, জেলাপর্যায় এবং ছাত্রদল থেকে অন্তত সাড়ে চারশ নেতা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্য থেকে ২০১ জনকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হবে। এ সংক্রান্ত খসড়া তালিকা ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে। এখন তা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবু ও জুয়েল স্ব স্ব অনুসারীদের প্রাধান্য দেয়ায় প্রকৃত অর্থে ত্যাগী ও মাঠের নেতারা বাদ পড়তে পারেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। চূড়ান্ত কমিটিতে মূল্যায়ন না হলে বাবু-জুয়েল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে।’

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য কাজ চলছে। আপনারা দ্রুত-ই সেটা দেখতে পাবেন।’ ২০১ সদস্য-বিশিষ্ট কমিটি গঠন হবে বলেও জানান তিনি।

সভাপতি শফিউল বারী বাবুও একই সুরে বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে।’

কমিটির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে আপনার প্রশ্ন করা কি উচিত?’

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় বিবেচনা করছেন- এমন প্রশ্নে বাবু বলেন, ‘বিগত সময়ে যারা সরকারের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, রাজপথের সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন- তাদের নিয়েই কমিটি গঠিত হবে।’

‘শোনা যাচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আপনার অনুসারীদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে’- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি রাস্তায় আছি, আমি আপনার সঙ্গে পরে কথা বলি।’