প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সময়সীমা এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর করা হচ্ছে। কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠদান আনন্দপূর্ণ করে তুলতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালের মধ্যে ‘শিশু শ্রেণি’ নামে এ স্তরের শিক্ষাকে ধাপে ধাপে দুই বছর মেয়াদে উন্নীত করা হবে। এছাড়া ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর নির্ধারণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ক্লাস রুম উপযোগী করে তুলতে সারাদেশে নতুন করে আরও ৩০ হাজার ‘ডেডিকেটেড ক্লাসরুম’ বা ‘শিশু উপযোগী শ্রেণি কক্ষ’ নির্মাণ করা হবে। প্রাক-প্রাথমিকের ২৬ হাজার বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
বর্তমানে প্রাথমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ বছর বয়স নির্ধারণ থাকলেও তা চার বছর করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কোমলমতি শিশুদের বয়স উপযোগী কারিকুলামও প্রণয়ন করা হবে। প্রাক শিক্ষক বদলিতে নীতিমালায় কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। শিশুদের পরিচর্যার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে ‘কেয়ার গিভার’ (পরিচর্যাকারী) নিয়োগ দেয়া হবে। ২০২২ সাল থেকে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তার আলোকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাস্তরকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। শিক্ষানীতি-২০১০-এ দুই বছরের প্রাক-প্রাথমিকের কথা বলা আছে। সে কারণে এর সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ স্তরের শিক্ষা দুই বছরে উন্নীত করতে একটি যুযোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়নে কমিটি কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, এর পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক স্বল্পতাসহ আরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো নিয়েও কাজ চলছে। ‘মুজিব বর্ষকে’ সামনে রেখে এসব পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে আমরা দুই বছরে উন্নীত করব।
জানা গেছে, ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি ও ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ দুই বছর করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। যার আলোকেই ইতোমধ্যে এ নিয়ে জোরেসোরে কাজ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারই অংশ হিসেবে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে সম্প্রতি এর সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)।
দাতা সংস্থা ইউনিসেফের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত ওই কর্মশালায় মন্ত্রণালয়, এনসিটিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থার প্রতিনিধি ও ইসিডির (আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট) কর্মকর্তারা তাদের সুনির্দিষ্ট মতামত ও নানা চ্যালেঞ্জের নিয়ে আলোচনা করেন। এসব চ্যলেঞ্জ ও সমস্যাগুলো একত্রিত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। গত ২৮ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ডিপিই-এর মহাপরিচালক।
প্রতিবেদনে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার আগে ১১টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে প্রথমত বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা, পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধন করার চেষ্টা করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।