দলীয়প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বা সরকার পতনের আন্দোলনের কথা বলা হলেও সে হালে পানি পাচ্ছে না বিএনপি। দলটির নেতারা এখন প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে আত্মসমালোচনায় সরব হয়ে উঠছেন।
বিপদের সময় খোঁজ না নেয়া এবং আন্দোলন তৈরিতে ‘ব্যর্থতার’ জন্য বিএনপির নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন তৈরির সুযোগ থাকলেও নেতারা তা করতে পারেননি।’
গত ২৪ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, ‘তিনবার জেলে গিয়েছি। প্রত্যেকবার রাজপথ থেকে গিয়েছি, আমাকে বাসা থেকে ধরেনি কখনও। একটা লোক ফোন করে খবর নেয়নি। এবার একমাত্র রিজভী (রুহুল কবির রিজভী) ফোন করে খবর নিয়েছিল, আমার পরিবারের খবর নেয়ারও চেষ্টা করেছে। ২৮ বছর এ দল করি। কোনো সহমর্মিতা নাই।’
গত ২৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আইনজীবীদের এক সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হয়েছে। আমরা প্রতিবাদও করতে পারলাম না। এটা আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের দুর্ভাগ্য।’
২১ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আলোচনা সভায় দলীয় এমপিদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। ‘মুক্ত হয়েই বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন’- দলীয় সংসদ সদস্যদের এমন বক্তব্যে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।
গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস যুবদলের কঠোর সমালোচনা করেন।
আব্বাস বলেন, ‘আমরা যুবদলের নেতৃত্ব তৈরি করতে পারিনি। চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে।’ সেখানে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কেউ কেউ ফিসফিসিয়ে হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আশ্বস্ত করেছেন যে, খালেদা জিয়া প্যারোলের জন্য রাজি হবেন। আমরা একটু লোভ সামলাতে পারলাম না। আমাদের ক’জন সংসদে গিয়ে হাজির হলেন। আজ তারা সংসদ থেকে এসে বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে লন্ডন যাবেন।’
‘ম্যাডামের মুক্তি অনেক আগেই হওয়ার কথা। এ কারণে নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে সংলাপও হয়। কিন্তু সেখানে অন্যান্য জোটের নেতারা ছিলেন, যে কারণে সেখানে ম্যাডামের মুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য পায়নি’- বলেন গয়েশ্বর।
তিনি আরও বলেন, “খালেদা জিয়া জেলে থাকুক, তাতে তিনি ছোট হবেন না। কিন্তু খালেদা জিয়াকে অপমান করার দুঃসাহস, মনে হয় আমাদের কারও থাকা উচিত নয়। খালেদা জিয়ার মৃত্যু যেখানে লেখা আছে সেখানে হোক কিন্তু এর দায়িত্ব যদি কেউ বহন করে, এটা দৃশ্যমান হয় তার পরে কী হবে? আমি মীরজাফর বলব না, মীরজাফর তো একটা নাম। তবে দলে কেউ ‘জাফর’ হতে পারেন।”
এরও আগে অর্থাৎ গত ১৫ অক্টোবর গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সভায় বলেন, ‘আমাদের মধ্যেও এ রকম একটা দালাল শ্রেণি আছে, এটা মিথ্যা নয়। যারা খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির কথা বলছেন, তারা সরকারের সাথে সমঝোতা করছেন।’
গত ১ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদ সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক দলের নীতিনির্ধারণীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আন্দোলনের জন্য সবাই প্রস্তুত! আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেন, বিএনপির আন্দোলনের হেডাম নাই, আন্দোলন করেন, জামিন করেন। আমারও আজ ওবায়দুল কাদের সাহেবের সঙ্গে প্রশ্ন, আমরা মাঠে নামছি না কেন?’