ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের যাত্রা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। প্রথম ম্যাচে দিল্লি জয়ের পর রিয়াদ-মুশফিকদের মতো সিরিজ জয় নিয়ে স্বপ্নের জাল বোনে ১৬ কোটি বাঙালি। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে টানা হেরে সেই স্বপ্ন মিইয়ে যায়। অল্পের জন্য হলো নাÑ আছে সেই আক্ষেপ। এবার শুরু অন্য যাত্রা। খেলতে হবে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্ট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আওতায় পড়ায় ভারতের মাটিতে এই টেস্ট সিরিজের গুরুত্ব বেড়ে গেছে বহুগুণ। টি-টোয়েন্টিতে ভারত তারুণ্যনির্ভর দল গড়লেও টেস্টের জন্য পূর্ণ শক্তির দলই দিয়েছে।

এর গুরুত্ব বুঝেই হয়তো টিম হোটেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনকে দেখা গেল বেশ ব্যস্ত। তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে তিনি নাগপুরে গিয়েছিলেন। গভীর রাতে হোটেলে ফেরার ধকল সামলে ক্রিকেটারদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। বারবার ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। মুশফিকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে আলোচনা করতে দেখা গেছে। পরে টিম বাসে উঠে আবার টেস্ট দলের সঙ্গে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি।

টাইগাররা ইন্দোরের উদ্দেশে নাগপুর ছেড়ে যায় গতকাল বেলা ১১টার দিকে। অধিনায়ক মুমিনুল হকের নেতৃত্বে ১৪ জন সদস্য ইন্দোরে যান। টেস্ট দলে থাকা মোসাদ্দেক হোসেন পারিবারিক কারণে দেশে ফিরে যাচ্ছেন। তার পরিবর্তে কে যাচ্ছেন অথবা তিনিই আবার আসবেন কিনা এ বিষয়ে কিছু জানায়নি বিসিবি। রিয়াদ-মুশফিকদের সঙ্গে আগেই যুক্ত হয়েছিলেন টেস্ট দলের সদস্য অধিনায়ক মুমিনুল হক, সাইফ হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, ইমরুল কায়েস, আবু জায়েদ রাহী, নাঈম হাসান ও এবাদত হোসেন। নাগপুরে দুদিন আলাদা অনুশীলনও করেন মুমিনুলরা। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি দলে থাকা পাঁচ সদস্য সৌম্য সরকার, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, মোহাম্মদ নাইম শেখ, আরাফাত সানি ও আফিফ হোসেন ঢাকার উদ্দেশে নাগপুর ত্যাগ করেন মুশফিকরা যাওয়ার পরই।

পাপনের আশা বাংলাদেশ টেস্টে খারাপ করবে না। অন্তত সম্প্রতি ভারতের মাটিতে টেস্টে ধবল ধোলাই হয়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ভালো করবে বলে তার প্রত্যাশা। পাপন জানান, ‘আমাদের যদি ফরম্যাট দেখেন, ওডিআইতে আমরা মোটামুটি ভালো, কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে আমরা উইক। টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইক। ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে সে দেশে এসে খেলা কম কিছু না। সাউথ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষেও তিন দিনে টেস্ট শেষ হয়ে যায়। পিংক বল আমাদের জন্য কঠিন। এর আগে খেলিনি। ওরাও খেলেনি। দেখা যাক কী হয়। তবে আমি বলব, ওরাও বলছে সাউথ আফ্রিকার চেয়ে আমরা ভালো খেলব। এখন যদি সেটা করতে পারি, সাউথ আফ্রিকার চেয়ে ভালো খেলতে পারি, সেটাই হবে সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

টেস্টে ভালো করবে টাইগাররাÑ এমন আশা করছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও। ‘আমরা চাই ইতিবাচক এবং ভালো ক্রিকেট খেলতে। প্রথম দিন ভালো করতে পারলে এবং প্রতিটি সেশন হবে ভেরি ইমপরট্যান্ট। এটা করতে পারলে তা হবে অনেক বড় অর্জন’Ñ এভাবেই বলেন নান্নু।

টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে এমন হারের পর দলের সবাই ছিল কিছুটা বিমর্ষ। নাগপুরে সিনিয়র ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স বিসিবি সভাপতিও মেনে নিতে পারেননি। বারবার বলছিলেন, ‘মুশফিক, রিয়াদ, আফিফ, আমিনুলরা ৪০ রানও করতে পারল না? তবে ভারতের মাটিতে লড়াইয়ের মানসিকতাকে বাহবাই দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে এর আগে আমরা পূর্ণাঙ্গ সিরিজ পাইনি, অনেক চেষ্টা করেছি। আমার আগে যারা ছিলেন তারাও চেষ্টা করেছেন। আমি যতজনের সঙ্গে বসেছি তারা বেশ বাহবা দিচ্ছেন। তারা ভাবতেও পারেনি বাংলাদেশের সঙ্গে এত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজ হবে।’

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে হলকার স্টেডিয়ামে ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রথম টেস্ট। টাইগারদের চোখ এখন এদিকেই।