ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি নীতিমালা জারি করেছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক এবং সদস্যদের যোগ্যতা হবে এসএসসি উত্তীর্ণ। ইতোপূর্বে কমিটি গঠন এবং কমিটির দায়িত্ব কর্তব্যের বিষয়ে জারিকৃত সব প্রজ্ঞাপন বাতিল করে গত ৬ নভেম্বর এ নীতিমালা জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নামে এ কমিটিতে ১১ জন সদস্য রয়েছেন। পদাধিকারবলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্য থেকে মনোনীত একজন নারী ও একজন পুরুষ যাদের যোগ্যতা হবে এসএসসি পাস। বিদ্যালয়ের একজন জমিদাতা বা জমিদাতার উত্তরাধিকারী, একই উপজেলার সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষিকা, সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত একজন শিক্ষক প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্য হতে নির্বাচিত দুইজন নারী অভিভাবক ও দুইজন পুরুষ অভিভাবক এবং ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের একজন সদস্য বা পৌর এলাকার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনার বা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর।
কমিটি গঠন পদ্ধতি নিয়ে বলা হয়- কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে সভাপতিসহ মোট ১১ জন। সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি ব্যতিরেকে অন্য সদস্যদের থেকে একজন সভাপতি এবং একজন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন।
সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়ে বলা হয়, সভাপতিকে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। আর একই ব্যক্তি দুইবারের অধিক একই বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হতে পারবেন না।
সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসারের নেতৃত্বে অভিভাবক সদস্য পদে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। সদস্য নির্বাচনের ব্যয় মনোনয়নপত্র বিক্রির অর্থ নির্ভর করা হবে। মনোনয়ন পত্রের মূল্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্ধারণ করবে। প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ভর্তি রেজিস্ট্রার ও হাজিরা খাতার ভিত্তিতে ন্যূনতম ৬০ দিন আগে প্রস্তুতকৃত খসড়া ভোটার তালিকা সংশ্লিষ্ট সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার চূড়ান্ত করবেন।
কমিটির মেয়াদ নিয়ে বলা হয়, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার তারিখ থেকে তিন বছর পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে পরবর্তী কমিটির নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রধান শিক্ষক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
কমিটি বাতিলের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়, সরকারি আদেশ অমান্য আর্থিক অনিয়ম এবং যেকোনো শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যক্রমে কমিটি জড়িত থাকলে ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল হবে। এছাড়া সভাপতি নির্বাচিত সদস্যগণ যেকোনো সময়ে উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার এবং সভাপতির কাছে লিখিতভাবে অপারগতা জানিয়ে পদত্যাগ করতে পারবেন। পরে এডহক কমিটি দায়িত্ব পালন করবে।
এডহক কমিটির গঠনে বলা হয়েছে- সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এডহক কমিটির সভাপতি হবেন। আর বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও ওই এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সদস্য এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
দেশের ৬১ জেলার স্কুলের জন্য এই নীতিমালা প্রযোজ্য হলেও পার্বত্য জেলা- রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার জন্য প্রযোজ্য হবে না। তবে পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ এ নীতিমালার আলোকে সংশ্লিষ্ট জেলার নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারবে এবং প্রণীত নীতিমালা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্কুলগুলোতে বিদ্যমান কমিটির বিষয়ে বলা হয়েছে, এ প্রজ্ঞাপন কার্যকর হওয়া সত্ত্বেও ইতোপূর্বে জারিকৃত আদেশের আওতায় গঠিত বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিসমূহ নির্ধারিত মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের উপর প্রতিবছর মে, আগস্ট ও ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসারের কাছে নির্ধারিত কমিটির সদস্য সচিব প্রতিবেদন পাঠাবেন।
ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক শাস্তি প্রদান পরিহার নিশ্চিতকরণ; বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি বিদ্যালয় পর্যায়ে ব্যয়িত অর্থের হিসাব অনুমোদন; বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সত্যনিষ্ঠা ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের বিষয়ে ভূমিকা পালন; কমিটির সকল সদস্য প্রতি মাসের শেষ কর্মদিবসে বা নিকটবর্তী দিবসের পাঠদান কর্মসূচির পরে অন্তত একঘণ্টা ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ বা পরামর্শ শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে সম্পদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ; বিদ্যালয়ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন; একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম; প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা; বিদ্যালয় নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার কাজ পরিবীক্ষণ; শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ; দুর্যোগকালীন শিক্ষা অব্যাহত রাখা; বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করবে ব্যবস্থাপনা কমিটি।