ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন কাওসার (২৮) নামের এক যাত্রী। তবে দুর্ঘটনায় পাজরের হাড় ভেঙে গেছে তার। পায়েও আঘাত পেয়েছেন। বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাসপাতালের বেডে শুয়েই দুর্ঘটনার মুহূর্তের বর্ণনা দিচ্ছিলেন দুর্ঘটনাকবলিত উদয়ন এক্সপ্রেসের এই যাত্রী। তিনি বলেন, ‘ট্রেনটি মন্দভাগ রেলস্টেশনে এলাকায় আসা মাত্র সজোরে ধাক্কা খায়। তখন ভেবেছিলাম, কেউ বোমা মেরেছে! মনে হয়েছিল ট্রেনটি ১০ হাত ওপরে উঠে গিয়ে নিচে পড়েছে। আমার শরীর ওপরে উঠে গিয়ে নিচে আসনের ওপর আছড়ে পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উদ্ধারকারীরা আসার পর আমার পাশে পড়ে থাকা তিন বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুর লাশ তাদের হাতে তুলে দিই। পরে আমাকে উদ্ধার করা হয়। তখনই আমি জ্ঞান হারাই।’
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৪৮ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দভাগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন কাওসার জানান, তার বাড়ি হবিগঞ্জের সদর উপজেলার উত্তর শ্যামলী গ্রামে। পেশায় তিনি সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক। চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে গতকাল সোমবার রাতে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে তিনি উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনের ‘জ’ বগির ৫০ নম্বর আসনের যাত্রী ছিলেন তিনি।
একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার তিরাশি গ্রামের জাহাঙ্গীর মাল (৪০)। পেশায় মৎস্যজীবী। তার ভাষ্য, চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে মাছ ধরেন। মাজার জিয়ারত করতে সিলেট গিয়েছিলেন। তার বাম পা ভেঙে গেছে।
মৌলভীবাজার হেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বুনো বীর গ্রামের আবদুস সোবহান (৪০) মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তিনিও ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। পেশায় তিনি কৃষি শ্রমিক।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জন আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে ১৩ জনকে আনা হয়। এর মধ্যে সাড়ে আট বছরের একটি মেয়ে শিশুকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। সঙ্গে পরিবারের কেউ ছিল না। তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকি নয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।