সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার এবং প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন। তাদের ছাড়াই জাতীয় সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংগঠনটির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি।

১৯৯৭ সালের তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি গঠিত হয়। ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ। সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি ও পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি প্রায় ১৭ বছর ধরে সংগঠনটির নেতৃত্বে ছিল।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও কমিটি হয়নি সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ এ দুই ইউনিটের। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দিনেই এ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটির অভিভাবক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সে হিসেবে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন।

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন। সেখানে তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সেবার মানসিকতা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, সারাদেশে শিশু-কিশোরদের মাঝে এই সেবার মানসিকতা ছড়িয়ে দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, নিজেরাও একটা সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন করতে হবে যাতে শিশু-কিশোরদের মাঝে সেবার মানসিকতা গড়ে ওঠে এবং তারা উদ্বুদ্ধ হয়।

এর আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহের সভাপতিত্বে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু।

দ্বিতীয় পর্বে সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচনে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে ওই অধিবেশনে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ সম্মেলন শুরুর আগে জাগো নিউজকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে আমরা শতভাগ প্রস্তুত। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছি।

‘সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দাওয়াত দেয়া হবে না। তবে বিদেশ কমিটিতে যারা রয়েছেন সম্মেলন কেন্দ্র করে তারা ইতোমধ্যে দেশে এসেছেন। সম্মেলনে বিদেশি কোনো অতিথি থাকবে না।’

দীর্ঘ ১৩ বছর পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত ১১ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সম্মেলনে সভাপতি পদে ১৪ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৮ জনের নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করা হয়। পরদিন ১২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সম্মেলনে সভাপতি পদে ১১ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জনের নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করা হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করার সুযোগ দেয়া হবে। যদি তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হন তাহলে আমাদের নেত্রী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সহযোগিতা করবেন।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি পদপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনটির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ, সহ-সভাপতি মতিউর রহমান মতি, মঈন উদ্দিন মঈন, সৈয়দ নূরুল ইসলাম নূরু ও নির্মল কুমার চ্যাটার্জী প্রমুখ।

সংগঠনটির সূত্রে আরও জানা যায়, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, আবদুল আলীম বেপারী প্রমুখ।

সংগঠনটির সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান খান ইরান। এছাড়া সভাপতি পদ পেতে আলোচনায় আছেন সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক, গোলাম রাব্বানী, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া। একই শাখার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন সদ্য বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান পান্না, আফরোজ হাবিব, মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের তেজগাঁও থানা সভাপতি সর্দার আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদপুর থানা সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি পদ পেতে চান সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে লবিং-তদবির চালাচ্ছেন সদ্য বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মির্জা মোরশেদুল আলম মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সবেক সভাপতি আনিসুর রহমান, আসাদুজ্জামান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচনে ভূমিকা পালন করে থাকেন। সেক্ষেত্রে ঢাকার দুই শাখার প্রস্তাবিত ও সমর্থিত সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে যাদের নাম আসবে সেখান থেকেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।