নিউজ ডেক্স
আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার একদিনের মাথায় বিদ্রোহের সুর উঠছে বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রদলে। ঘোষিত কমিটিতে ঠাঁই না হওয়া এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও বাদ পড়ার শঙ্কায় বঞ্চিদের মধ্যে বিদ্রোহ দানা বাঁধছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের নতুন কমিটিতে স্থান; সিনিয়র ও বিবাহিতদের বাদ দেয়ার ফর্মুলা নিয়ে কাজ করছেন বর্তমান নেতারা— এমন অভিযোগ বিদ্রোহীদের কণ্ঠে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুগতদের কমিটিতে পদায়ন এবং একটা বড় অংশের নেতাকর্মীদের সংগঠন থেকে বাদ দেয়ার নীল নকশা বাস্তবায়ন হচ্ছে— এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফুঁসছেন বিদ্রোহীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির এক সহ-সভাপতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দুঃসময়ে সংগঠনকে সংগঠিত করার কথা থাকলেও বর্তমান নেতৃবৃন্দ ‘মাই ম্যান’ খুঁজে কমিটি দিচ্ছেন যা এই বিদ্রোহকে ত্বরাণ্বিত করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে জুনিয়রদের দিয়ে কমিটি করা হচ্ছে এর ফলে বাদ পড়ছেন সিনিয়রদের অনেকে। যাদেরকে পদায়ন করা হচ্ছে তাদের মধ্য থেকে আবার বেছে বেছে নিজের অনুসারীদেরকেই কমিটিতে স্থান দিচ্ছেন।
এদিকে ৬০ জনের আংশিক কমিটির তালিকা প্রকাশের এক দিনের মাথায় শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তিন দফা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কমিটিতে ঠাঁই না হওয়া বিবাহিত ও সিনিয়র নেতাদের একটি অংশ এভাবে বিদ্রোহের আভাস দিচ্ছেন। এমনকি আগামীকাল (রবিবার) এ নিয়ে বিক্ষোভ করতে পারেন— এমন আভাসও দিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতাদের কেউ কেউ।
জানা যায়, রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকাল পাঁচটা ও ছয়টার দিকে দুই দফায় ককটেল ফাটানো হয়। ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও রাত সাড়ে ৮টায় তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আরও একটি ককটেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় সেখানে পড়ে ছিলো।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক শীর্ষ নেতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে পদ প্রত্যাশী অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে এ ককটেল ফাটিয়ে থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে পল্টন থানার পুলিশ বলছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ককটেল বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি। তবে এইগুলো কারা ফাটিয়েছে এ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।
এর আগেও কমিটিতে থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় নয়া পল্টনে বিক্ষোভ ও অনশন করেছিলেন বিবাহিত ছাত্রদল নেতারা। পরে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদেরকে পদায়নের আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙান। সেটা কি শেষ পর্যন্ত আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থাকবে তা নিয়েও শঙ্কায় ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে ৬০ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। গত ১৯ অক্টোবর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল হন। গত (রাজিব-আকরাম) কমিটি ছিলো ৭৩৪ সদস্য বিশিষ্ট। ছাত্রদলের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের খবর অনুযায়ী এবার ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হবে। এর মাধ্যমে একটা বিশাল সংখ্যক নেতাকর্মী অটোমেটিক্যালি বাদ পড়ে যাচ্ছেন, যা সংগঠনেরে ভাঙনকে আরো ত্বরাণ্বিত করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিজের মতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ছাত্রদলের ওই সহ-সভাপতি বলেন, আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি হওয়ার কথা ছিলো ৫১ সদস্যের। পরে সেখানে করা হলো ৬০ সদস্যের। সাংগঠনিক নীতি হলো কমিটি সবসময় বেজোড় হয়। কিন্তু বর্তমান কমিটি নিজেদের লোক ঢুকাতে ঢুকাতে সংখ্যা বড় করে ফেলেছেন। এর ফলে বাদ পড়াদের মনে সংশয়; কতো আর নিবেন কমিটিতে! সংগঠন তার সাংগঠনিক নীতিতে চলছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।