গলফে ফরহাদের আকাশছোঁয়া স্বপ্ন

২৫ বছর বয়সী অদম্য তরুণ গলফার ফরহাদ। হৃদয়জুড়ে তার বাংলাদেশ। গলফে যার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। সোনালি অর্জনের মাধ্যমে লাল সবুজের পতাকাকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মেলে ধরতে চান।

বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চান সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে।
গলফে আগামীর সম্ভাবনাময় তরুণ ফরহাদের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের হাজীপুরা গ্রামে। খেলেন গলফ জাতীয় দলে।

জাতীয় দলে তার র‌্যাংকিং সবার শীর্ষে।

সদ্য শেষ হওয়া এস এ গেমসে গলফ প্রতিযোগিতায় ফরহাদ ও তার টিম বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। দলগত ও ব্যক্তিগত অর্জনে দ্বিতীয় বিজয়ী হিসেবে জিতেছেন রৌপ্য। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে খোলামেলা সাক্ষাতে জানান তার স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা।

প্রতিভাবান গলফার ফরহাদ মনোহরগঞ্জের হাজীপুরা গ্রামের মৃত আবদুল মোতালেব মজুমদার ও মোরশিদা বেগমের ছেলে।

১০ বছর বয়স থেকেই খ্যাতিমান গলফার হওয়ার স্বপ্ন ফরহাদের। ইচ্ছার কথা জানান বাবা-মাকে। তাদের উৎসাহে এগিয়ে যেতে থাকে। ১৫ বছর বয়সে বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে থমকে দাঁড়ায় হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন। বাবার মৃত্যুর শোক কিছুটা কাটিয়ে মায়ের অনুপ্রেরণায় নতুন করে স্বপ্ন জয়ের গল্প শুরু হয়
টেলিভিশনে দেশ-বিদেশের প্রফেশনাল গলফারদের খেলা দেখে নিজের প্রতিভায় কৌশল আয়ত্ত করে নেন। ২০১২ সালে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট তথা ময়নামতি গলফ ক্লাবে প্র্যাকটিস শুরু করেন ফরহাদ। তুমুলভাবে চলতে থাকে তার প্র্যাকটিস। ঝুলিতে আসতে থাকে একের পর এক সাফল্য। ভালো পারফরম্যান্সের জন্য ময়নামতি গলফ ক্লাব থেকে স্কলারশিপ লাভ করেন। দিনের পর মাস-মাসের পর বছর। এভাবে চলতে চলতে ২০১৬ সালে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ মিলে যায় ফরহাদের।

মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে গলফে ফরহাদের নতুন যাত্রা শুরু হয়। জাতীয় দলে অনুশীলনের সুযোগ পেয়ে নিজের প্রতিভাকে সহজেই দ্রুততম সময়ে জাগিয়ে তোলেন। আসতে থাকে সাফল্য। পৌঁছে যান জাতীয় দলের শীর্ষ র‌্যাংকিংয়ে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ইতিমধ্যে ভুটান, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া সফর করেছেন। সদ্য শেষ হওয়া এসএ গেমসে ফরহাদ ও বাংলাদেশ জাতীয় দল গলফ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়নের প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান। কিন্তু বাংলাদেশ টিমের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স সমতা না থাকায় শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড় থেকে পিছিয়ে পড়ে। দ্বিতীয় দল হিসেবে রানার্সআপ হয়ে রৌপ্য পদক নিয়ে বাংলাদেশ টিমকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। টিমে ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী হিসেবেও রৌপ্য জিতেছেন ফরহাদ।

ফরহাদ জানান, গলফে জাতীয় দলের খেলোয়াড়- এটাই আমার সান্ত্বনা। সরকারি বেতন-ভাতা বা ভালো প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গলফে বাংলাদেশ টিম পিছিয়ে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে টিমকে সাপোর্ট দেওয়া হলে গলফে বাংলাদেশ সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। অদম্য দৃঢ়প্রত্যয়ী এ গলফার আরও বলেন, কী পেয়েছি, কী পাইনি এটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে, আমার পরিচয় আমি বাংলাদেশের নাগরিক। আমি জাতীয় দলের খেলোয়াড়। লাল-সবুজের পতাকার সঙ্গে জড়িত এ সম্মান। তাই এখন শুধু স্বপ্ন, লাল-সবুজের পতাকাকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মেলে ধরা। গলফে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।

ভবিষ্যতে পরিকল্পনা সম্পর্কে ফরহাদ বলেন, সামনে এসএ গেমস প্রতিযোগিতায় গলফে বাংলাদেশকে স্বর্ণ জিতিয়ে বাংলাদেশ টিম ও নিজের প্রতিভার জানান দিতে চাই। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাপে খেলার সুযোগ পেলে চমক দেখাতে চাই। খেলোয়াড় হিসেবে গলফ খেলা কতটুকু আনন্দ দেয়- এমন প্রশ্নে অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন গলফার ফরহাদ। বলেন, আমার অস্তিত্বের সঙ্গে গলফ মিশে আছে। গলফ কতটুকু ভালোবাসি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। গলফে লাল-সবুজের পতাকাবেষ্টিত বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করি- এটা গৌরব ও আনন্দের। গলফে স্বপ্ন জয়ের মাধ্যমে এ অনুভূতির স্বাক্ষর রাখতে চাই।