ঢাকাবাসীর কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালো স্নাতে স্বপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বাবা-মা হারানো তাপস মানুষের ভালোবাসাকে পুঁজি করেই স্বপ্নের উন্নত ঢাকার পথ চলায় আপনার আস্থা ও সমর্থন প্রত্যাশা করেছেন। নির্বাচিত হলে নাগরিক সব মৌলিক সেবা ৯০ দিনের মধ্যেই নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করে মেয়র পদে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন তিনি।
‘আমাদের ঢাকা আমাদের ঐতিহ্য’ শীর্ষক খোলা চিঠিতে তিনি বলেছেন, ঢাকাতে হারিয়েছি আমার পিতা-মাতাকে, কাটিয়েছি শৈশব এবং কৈশোৱেৱ দিনগুলো, পড়াশোনা, খেলাধুলা, আর আড্ডায় মেতেছি, বন্ধুদের নিয়ে বেড়ে উঠেছি, আবদ্ধ হয়েছি বিবাহ বন্ধনে-আজ বৃহৎ পরিসরে সেই ঢাকাবাসীর সেবার লক্ষ্যে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছি।’
তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি ঢাকা ১০ (ধানমন্ডি-হাজারীবাগ-কলাবাগান-নিউ মার্কেট) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। এখানকার জনগণ অনেক ভালোবাসা-আদর-দেহে আমাকে আলিঙ্গন করে গত তিন মেয়াদের ১১ বছরে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করার সুযোগ দিয়েছিল। রাজধানী ঢাকায় নাগরিকদের মৌলিক সুবিধা ও উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী ঢাকাবাসীর জন্যে বৃহৎ পরিসরে কাজ করা ও দৃঢ় পদপে নেওয়া জরুরি। সেই তাগিদেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
প্রাণের ঢাকাকে নিয়ে তাঁর পাঁচ পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। তাপসের ৫ পরিকল্পনা নিম্নরূপ :
ঐতিহ্যের ঢাকা : চারশত বছরের পুরনো আমাদের এই ঢাকার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাসের উজ্জ্বল ছবি ও ঐতিহ্যের গভীর শেকড়, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব। এখানে ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদও অনন্য। সাংস্কৃতিক ধারায় রয়েছে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, পহেলা বৈশাখ, ঘুড়ি উৎসব, চৈত্র সংক্রান্তিসহ অজয় উৎসব। আমি নির্বাচিত হলে সকলকে নিয়ে সমন্বিত প্রয়াসে মহাপরিকল্পনা ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করে ঢাকাকে তার স্বকীয় গৌরবে সাজিয়ে তুলে ধরবে বিশ্ব দরবারে।
সুন্দর ঢাকা : বুড়িগঙ্গা ও শীতল্যা দুই নদীর অববাহিকয় পত্তন হওয়া এমন শহর পৃথিবীতে বিরল। সুন্দর ঢাকা গড়ে তুলতে সবুজায়ন, পরিবেশ বান্ধব স্থাপনা বৃদ্ধি ও বায়ু দূষণ রোধ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা, নারী-শিশু ও প্রবীণদের জন্যে হাঁটার উন্মুক্ত স্থান, দীর্ঘমেয়াদী পরিকনায় বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পাড় ঘিরে বনায়ন, বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনসহ ব্যাপক সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে সুন্দর ঢাকা গড়তে চাই।
সচল ঢাকা : যানজটের কারণে রাস্তায় চলাচল হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো ও ফিরে আসতে নিরস্তুর সংগ্রাম কতে হয়, বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের বিড়ম্বনা অপরিসীম। আমরা গণপরিবহনের সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিছু রাস্তায় দ্রুতগতির যানবাহন, কিছু রাস্তায় ধীরগতি যানবাহন, আবার কিছু রাস্তায় শুধু মানুষ হাঁটার ব্যবস্থা করব। নদীর পাড়ে থাকবে সুপ্রশস্ত রাস্তা, যেখানে পায়ে হেঁটে চলা যাবে, চালানো যাবে সাইকেল, রিকশা ও ঘোড়ার গাড়ি। দ্রুতগামী যানবাহনের জন্য থাকবে আলাদা পথ, থাকবে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা। এভাবে গড়ে তুলব আমাদের সচল ঢাকা।
সুশাসিত ঢাকা : ঢাকায় এক সময় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ছিল। আমরা মাদক নির্মূলসহ এলাকাভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কার্যকর করব। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন হবে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা। বছরের ৩৬৫ দিন, সপ্তাহের ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য খোলা থাকবে। মশকের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস, মশক নিধন ও ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে দৈনন্দিন ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন, বিধি ও নীতিমালার কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে ঢাকার উন্নয়ন ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের নিকট সমন্বিতভাবে দায়বদ্ধ করা হবে।
উন্নত ঢাকা : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত রূপকল্প ২০৪১ সালে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ এর উন্নত রাজধানী ঢাকা গড়তে দীর্ঘ ত্রিশ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রত্যেকটি উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মান নিরূপণ করে অন্তত দশ বছর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হবে। আমদের এই ঢাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির আলিঙ্গনে, নানা গোত্র-বর্ণের সাংস্কৃতিক গৌরবময়তায় ও ঐতিহ্যমন্ডিত ঢাকা। এই ঢাকাতে জন্মেছি, বড় হয়েছি, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও স্বপ্ন দেখি এই ঢাকাকে ঘিরে।
ঢাকা বলতে আমার বেড়ে উঠা এই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকাকেই বুঝি। ব্যথাতুর হীম বুকে তাকিয়ে দেখি, এখানেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালো স্নাতে স্বপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে হারিয়েছি আমার বাবা-মাকে। কিন্তু বিগত দিনে এখানেই পেয়েছি ভালোবাসা-বন্ধন। এই ভালোবাসাকে পুঁজি করেই, স্বপ্নের উন্নত ঢাকার পথ চলায় আপনার আস্থা ও সমর্থনই আমার পাথেয়।
আপনদের সমর্থনে নির্বাচিত হলে নাগরিক সব মৌলিক সেবা ৯০ দিনের মধ্যেই নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ। এই ঢাকা আমাদের সবার প্রাণের ঢাকা। আমি আশা করি, আগামী ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নত ঢাকা গড়ে তুলতে সুযোগ দেবেন।’