আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যে বিজয়ের আলোকবর্তিকা তিনি (বঙ্গবন্ধু) আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, সে মশাল নিয়েই আমরা আগামী দিনে চলতে চাই। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই।’ গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনের স্মৃতিচারণা করে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিনটিতে আমরা হয়তো বিমানবন্দরে আসতে পারিনি, তখন আমার বাচ্চাটি ছোট ছিল, আমরা এমন অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু আমার মনে পড়ে মা সর্বক্ষণ একটি রেডিও নিয়ে বসেছিলেন, ধারাবাহিক বিবরণ শুনছিলেন, আমরা পাশে বসে সারাক্ষণ ধারা বিবরণী শুনেছিলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মনে পড়ে, তিনি কিন্তু বাংলার মাটিতে নেমে আমাদের কথা ভাবেননি, পরিবারের কথা ভাবেননি। তিনি চলে গিয়েছিলেন রেসকোর্স ময়দানে তাঁর প্রিয় জনগণের কাছে, তাঁর প্রিয় মানুষগুলোর কাছেই তিনি সর্বপ্রথম পৌঁছে যান। তারপর আমরা তাঁকে পাই। তিনি এ দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। চেয়েছিলেন এ দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে।’
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বঙ্গমাতা’ কবিতার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।’ এর উত্তর বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন সেই ১০ই জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে। জাতির পিতা বলেছিলেন, কবিগুরু দেখে যান আপনার সাত কোটি মানুষ আজ মানুষ হয়েছে, তারা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাঝখানে একটা কালো অধ্যায় আমার জীবন থেকে চলে গেছে, সেই কালো অধ্যায় যেন আর কোনো দিন আমাদের দেশের মানুষের উপর ছায়া ফেলতে না পারে। আমাদের দেশের মানুষ যেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলে এই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারে, সেই কামনা করে ক্ষণগণনার শুভ সূচনা ঘোষণা করছি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘চলুন আজকের দিনে আমরা সেই প্রত্যয় নিই যে এই বাংলাদেশ কারো কাছে মাথা নত করে না, বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে বিশ্বে চলবে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সেই সোনার বাংলা ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখার সময় তাঁর পাশে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
অনুষ্ঠানে ৪৮ বছর আগে ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী মঞ্চায়ন করা হয়। বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে প্যারেড গ্রাউন্ডে অবতরণ করে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনী থেকে কেনা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ডিসি-১০ বিমানটি অবতরণ করে। এই মডেলের বিমানেই বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেছিলেন। বিমানটি অবতরণের পর ৪৮ বছর আগের দিনের অনুকরণে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে চারদিক প্রকম্পিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় নেতারা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, উচ্চপদস্থ বহু সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। আগামী ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে মুজিববর্ষের কর্মসূচি শুরু হবে।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন : গতকাল সকাল ৭টায় ধানমণ্ডিতে ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল সশস্ত্র সালাম জানায়। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আবারও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাঙালির বিজয় ছিল অসম্পূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের মধ্য দিয়ে সেই বিজয় পূর্ণতা পেয়েছে। তাই এ দিনটি বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আওয়ামী লীগকে আরো সুসংগঠিত আর আদর্শিক দল হিসেবে গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়তে ভূমিকা পালনই হবে আজকের দিনের শপথ।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সাম্প্রদায়িকতা প্রধান অন্তরায়। আর এর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছে বিএনপি। সাম্প্রদায়িকতার এই বিষবৃক্ষের মূলোত্পাটন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’