সারা দেশে নিবন্ধিত ফিটনেসবিহীন, অনিবন্ধিত এবং চলাচলের অযোগ্য গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা, তদারকি ও বন্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে দেশের প্রত্যেক জেলায় একটি করে টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ও বিআরটিএ’র তত্ত্বাবধানে গঠিত এই টাস্কফোর্সে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিআরটিএ’র প্রতিনিধি সমন্বয়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করতে বলা হয়েছে। এ জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র এবং সড়ক পরিবহন সচিবের প্রতি।

এছাড়া টাস্কফোর্সের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, টাস্কফোর্স সড়ক আইন-২০১৮ অনুযায়ী আইনি  ব্যবস্থা নিতে পারবে টাস্কফোর্স। প্রয়োজন মনে করলে সংশ্লিষ্ট চালককে গ্রেপ্তার, গাড়ি জব্দ ও জরিমানা করতে পারবে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এ আদেশ দেন। আদেশ বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী ১ জুন পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। বিআরটিএ’র পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মইন আলম ফিরোজী ও অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম।

শুনানিকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর আইনজীবী আদালতে বলেন, মহাসড়কগুলোতেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এই মহাসড়কের দিকে আগে নজর দেওয়া দরকার।  সারা দেশে একসঙ্গে কাজ না করে আগে মহাসড়ক নিয়ে আদেশ দিলে তা বাস্তবায়ন সহজ হবে। তিনি বলেন, আইনে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া পুলিশও ব্যবস্থা নিতে পারে। এক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করায় শৃঙ্খলা আসছে না। তাই সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। এই টাস্কফোর্স গঠন করা হলে কাজ করা সহজ হবে।

শুনানিকালে আদালত বলেন, আমাদের যে পরিমাণ সড়ক  রয়েছে, সেই অনুপাতে গাড়ির নিবন্ধন দেওয়া উচিত। বিষয়টি বিআরটিএ-কে ভেবে দেখতে হবে। তা নাহলে এক সময় রাস্তায় চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন। আদেশের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বলেন, জনবল সংকটের কারণে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পারছে না বিআরটিএ। তাই টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশনা চান বিআরটি’র আইনজীবী। এ কারণে হাইকোর্ট টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন। এ টাস্কফোর্স ফিটনেসবিহীন, রেজিস্ট্রেশনবিহীন চালককে গ্রেপ্তার, জরিমানা ও গাড়ি ডাম্পিং করতে পারবে।

ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে গতবছর ২৩ মার্চ একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব। এরপর হাইকোর্ট গতবছর ২৭ মার্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে সারা দেশে ফিটনেসবিহীন ও নিবন্ধনহীন যানবাহন এবং লাইসেন্সহীন চালকের তথ্য জানাতে বিআরটিএ চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

আদালত অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। এর ধারাবাহিকতায় একের পর এক আদেশ দিচ্ছেন আদালত।