চক্রান্তে অসহায় আপন ভাই ভাতিজাসহ কয়েকটি পরিবার!!
স্থানীয় এমপি ও জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা 

গতবছর আলোচিত সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শিশু তুহিনের বিভৎস হত্যার কথা মনে আছে কি? প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের সন্তান কে নারকীয় কায়দায় খুন করে জন্মদাতা পিতা ও চাচা! ছুড়ির বাটে লেখা প্রতিপক্ষের দু’জনের নাম! এ সুত্র ধরেই পুলিশের নিরলস তদন্তে বেড়িয়ে আসে প্রকৃত খুনি। আপন মানুষগুলো কতটা ভয়ংকর হয়ে ওঠে আপনজন প্রতি শত্রুকে ঘায়েল করতে। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি তার একটি উদাহরণ মাত্র। এমন হাজারো ঘটনা উদাহরণ হিসেবে দেখানো যেতে পারে। কেবল জেদ শত্রুতা ও হিংসার বশবর্তী হয়ে মানুষ কতটা কুচক্রী, অমানবিক অমানুষ হয়ে ওঠে তার কিছুটা হলেও প্রমাণ পাওয়া যায় এমন বহু ঘটনা থেকে।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ২নং উত্তর দুর্গাপুর কৃষ্ণনগর ঘোড়ামারা এলাকার আঃ জলিল মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন জানান, তিনি পেশায় একজন মোটর পার্টস ব্যাবসায়ী। আলেখারচর মোড়ে জসিম মবিল হাউজ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী। অল্প পুঁজির ব্যবসা বেশী বাকী দেয়ার সামর্থ্য নেই তার।

আলমগীর হোসেন তারই আপন চাচা। যিনি এর আগেই ২০হাজার টাকা দোকান বাকী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া টাকা না দিয়েই নতুন করে বাকী চায়। এতে অপারগতা প্রকাশ করে জসিম। ভাতিজার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে চাচা আলমগীর। কিছুদিন পর চাচা আলমগীর আবারো পৈতৃক জমির কয়েকটি কাগজ চায় জসিমের দোকানে গিয়ে তার কাছে । পিতার অনুমতি ছাড়া কাগজ দিতে পারবে না জানিয়ে দেয় সে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানের সামনে গালাগাল করে জসিম কে মারতে উদ্যত হয় কয়েকবার, এরপর প্রকাশ্যেই হুমকি দিয়ে আসে ভাতিজাকে দেখে নেয়ার।
এরপর গত ২৬শে ডিসেম্বর ২০১৯ইং রাত আনুমানিক ১০টায় ব্যবসায়ীক কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে চাচা আলমগীর ও তার মেয়ের জামাই রহম আলী সহ ৭/৮ জনের একটি দল লোহার পাইপ, চাপাতি ও হকিষ্টিক সহ কালো হাইএইচ গাড়ি থেকে নেমে পথরোধ করে দাড়ায় জসিমের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু করে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও মারধর করে রক্তাক্ত করে মৃত ভেবে তাকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। পথচারীরা গুরুতর আহত অবস্থায় জসিম কে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। খবর পেয়ে পরিবার ও বাড়ির লোকজন হাসপাতাল যায়। এঘটনায় জসিমের মাথায়, পিঠে এবং বাহুতে বেশকয়েকটি সেলাই দেয়া হয়।

এর ৩দিন পর ২৯শে ডিসেম্বর ২০১৯ইং তারিখে জসিমের স্ত্রী মরিয়মের নেসা বাদী হয়ে চাচা শশুর আলমগীর, রহম আলী, পারভেজ, ফাহিম ও জাহিদ সহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে (মামলা নং-৫৫/১২, ২০১৯ইং)। এরপর গত ১জানুয়ারি দুপুরে এ মামলার ২নং স্বাক্ষি দুর্গাপুর চৌধুরী বাড়ির আবদুল মান্নান এর ছেলে রাসেলের উপর হামলা করে আলমগীর ও তার বাহিনী। মামলায় স্বাক্ষী হওয়ার কারনে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করা হয় রাসেলকে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রাসেল বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে কোতোয়ালি মডেল থানায়। সুস্থ হয়ে বাড়ি আসার পর থেকে নানা ভাবে হুমকি ধমকি দিতে থাকে বড় ভাই জলিল ও ভাতিজা জসিমকে, তার বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাচা আলমগীর হোসেন। প্রকাশ্যে হুমকি দিতে থাকে আবারো হামলা, হত্যা নচেৎ মাদক অস্ত্র বা অন্য কোন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর । মুর্তিমান আতংক ছোট ভাই আলমগীরের ভয়ে চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভুক্তভোগী পরিবারটি স্থানীয় গন্যমান্যদের সাথে আলোচনা করে, তাদের পরামর্শে একটি জিডি করেন। জসিমের পিতা জলিল মিয়া বাদী হয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারী কোতোয়ালি থানায় এ সাধারণ ডাইরিটি করেন। যাতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয় ছোট ভাই আলমগীর ও তার লোকজন হুমকি দিচ্ছে তাকে ও তার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর এবং হামলার । এছাড়াও এসকল মামলা ও জিডির অনুলিপি জেলা পুলিশ সুপার কুমিল্লা, রেঞ্জ ডিআইজি চট্টগ্রাম এবং আইজিপি ও র‌্যাব-১১ বরাবরেও প্রেরণ করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী জসিম কান্নারত কন্ঠে আরো জানায়, এত কিছুর পরেও চাচার চক্রান্তের হাত থেকে শেষ রক্ষা পেলাম না। শুধু সেই নয়, বয়োবৃদ্ধ অসহায় পিতা সহ চাচার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা, অভিযোগ ও জিডির স্বাক্ষীরাও মিথ্যা মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে । সামান্য কারনে স্থানীয় প্রভাবশালী আপন চাচা আলমগীরের কুটকৌশল চক্রান্ত আর হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে নিরপরাধ নির্দোষ বিচারপ্রার্থী মানুষগুলোকেই!

ভুক্তভোগীদের দাবী, চাক্রান্তের পরিকল্পনা সফল করতে, গত ১৩ই ফেব্রুয়ারী ও এর আগের রাতে চাচা আলমগীর হোসেন দুর্গাপুর ইউপির শংকরপুরে তার নিজ ফিসারী তানভীর মৎস খামারের পুকুরটি থেকে বেশীর ভাগ মাছই ধরে তা বিক্রি করে দেন। যা স্থানীয় কয়েকজন সচক্ষে দেখেছেন। আর ঐ রাতে মাছ ধরা ও বিক্রির কাজে সহযোগীতা করে কৃষ্ণপুর ঘোড়ামারা এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে সেলিম ওরফে সেইল্লা, জামাই রহম আলী, ছেলে তানভীর হোসেন, দুর্গাপুর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী তাজু মিয়া সহ কয়েকজন। পরদিন ১৪ই ফেব্রুয়ারী আনুমানিক মধ্য রাতে বা ভোর রাতে অল্পকিছু (আনুমানিক ৪-৫ মোন) মাছ অবশিষ্ট থাকা পুকুরটিতে দু’বোতল বিষ দেয়া হয়। যে বোতল দু’টো সহ উদ্ধার করা হয়েছে। সকালে মাছ মরে ভেসে ওঠে পানিতে, হৈচৈ শুরু হয় পুকুরপাড়ে। খামার মালিক আলমগীর, জামাই রহম আলী, সেলিম, ও আলমগীরের ছেলে তানভীর সহ কয়েকজন পুকুর পাড়ে মরা মাছগুলো তুলে রাখেন। স্থানীয় ফাঁড়ি কিংবা থানা পুলিশকে জানানোর আগেই খবর দেয়া হয় সাংবাদিকদের।
সকাল আনুমানিক ১০টায় আলমগীর হোসেন ও উপস্থিত স্বাক্ষীদের কয়েকজনের বরাত দিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানানো হয় খামার কর্মচারী ও মালিকের ছেলে তানভীরসহ স্বাক্ষীগন নিজ চোখে দেখেছেন আসামীদের। বাদীর দাবী পূর্ব শত্রুতার জেরে ১৪ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টায় পুকুরে বিষ দিয়েছে খামার মালিক আলমগীরের বড় ভাই জলিল, ভাতিজা জসিম, সুজন দাশ, রাসেল ও বাবুল সহ ৪/৫জন। পরে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মাহমুদ হাসান রুবেল সহ সঙ্গীয় পুলিশ। এ ঘটনায় ঐ দিন বিকেলে খামার মালিকের মেয়ের জামাই রহম আলী বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় উল্লেখিত আসামীদের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ২২ থেকে পঁচিশ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে মর্মে। বিভিন্ন পত্রিকা ও মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয় খবরটি। এরপর থানায় মামলাটি রেকর্ডও করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযোগে বর্নিত সময় অনুসারে ঐ রাতে নাজিরা বাজার ফাঁড়ির ট্রহল পুলিশের ব্যবহৃত পিকাপ গাড়িটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুকুরের অদুরেই মধ্যরাত থেকে সামনের মহাসড়কে সকাল সারে ৮টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। এসময় ফোর্সসহ এস আই মাহবুব ও এসআই দয়াল হরি গাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। পুকুর পাড়ে খামারের লোকজন পুলিশকে দেখলেও পুলিশকে কিছুই জানানো হয় নি। পরে গাড়ি ঠিক করিয়ে ফাঁড়িতে আসার ঘন্টা খানেক পর জানতে পারেন পুকুরে বিষ দেয়ার ঘটনা। এসব কথা নিজেরাই প্রতিবেদকের সামনে বলাবলি করছিলেন নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশের সদস্যরা।

ভুক্তভোগী জলিল মিয়া, জসিম, রাছেল, সুজন দাশ সহ তাদের পরিবারের অভিভাবক ও সদস্যরা বলেন, মামলা রেকর্ড হওয়ার পর থেকেই আসামীদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে, আলমগীর ও তার বাহিনীর লোকজন সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে এলাকায় ট্রহল দিতে থাকে। নিজেরাই ধরে মেরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার হুমকি দিতে থাকে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের। ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে উল্লখিত ভুক্তভোগীরা। আদালতে হাজির হয়ে মিথ্যা মামলায় জামিন নিতেও পারছেন না পথে বা আদালত গেটের বাইরে সন্ত্রাসী হামলার আশংকায়!

এমন ভয়ংকর চক্রান্ত ও উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থানীয় এমপি ও জেলা সুপার সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। 

পরদিন এসব বিষয়ে জানতে উক্ত মামলার বাদী রহম আলীকে ফোন দিলে তিনি ঐ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কোথায় আছেন আমি দিঘীরপাড় আছি আসুন আপনার সাথে সাক্ষাতে কথা বলবো’। পরে রহম আলী ও আলমগীর হোসেন সহ আরো দু’জন ক্যান্টনমেন্ট মার্কেটের কফি হাউজে এসে ঐ প্রতিবেদককে ফোন দেন। এসময় ঐ সাংবাদিকের সাথে আরো দুজন সিনিয়র সাংবাদিক সহ কফি হাউজে সাক্ষাৎ করেন। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন পুকুরে বিষ প্রয়োগের বিষয়টি এড়িয়ে যান বারবার। তিনি বড়ভাই ও ভাতিজা বৌ ও রাছেলের দায়েরকৃত পূর্বের মামলা ও অভিযোগগুলো মিথ্যা বলে দাবী করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত এক প্রতিবেদক কে তিনি প্রস্তাব করেন, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ও অভিযোগগুলো তুলে নিলে এ বিষয়টিও সমাধান করার জন্য রাজি আছেন তিনি। এসময় বিষ দিয়ে মাছ মারা ঘটনায় সঠিক সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়ে অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের প্রস্তাব ও করেন তিনি। এসব আলোচনার অডিও রেকর্ড সহ রেষ্টুরেন্টের সিসি টিভি ফুটেজও রয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশের এসআই মাহবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়েছি আনুমানিক ৪-৫মোন মরা মাছ পুকুরপাড়ে পরে ছিলো। তাৎক্ষণিকভাবে স্বাক্ষীদের দেয়া তথ্যের গড়মিল রয়েছে। পরিক্ষা নিরিক্ষার জন্য মরা মাছের নমুনা, পানি ও দুটো খালি কাচের বোতল উদ্ধার করে ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে অন্য কোন রহস্য থাকলে তা তদন্তে বেড়িয়ে আসবে।
উল্লেখিত ঘটনার দিন গভীর রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত পুকুরের সামান্য দুরে পুলিশ ভ্যানটি খারাপ হওয়া ও সেখানে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনিসহ এসআই দয়াল হরি।