একাধ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির দেওয়া ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে তা গ্রহণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাতে ওই প্রস্তাব গ্রহণের পর সংসদ অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সংবিধানের ৭৩ অনুচ্ছেদের ২ উপধারা অনুযায়ী ‘সংসদ সদস্যদের প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর প্রথম অধিবেশনের সূচনায় এবং প্রত্যেক বৎসরের প্রথম অধিবেশনের সূচনায় রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দান করিবেন’। উপধারা (৩) এ বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত ভাষণ শ্রবণ বা প্রেরিত বাণী প্রাপ্তির পর সংসদ উক্ত ভাষণ বা বাণী সম্পর্কে আলোচনা করিবেন’। আর রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে কার্যপ্রণালী বিধির ৭ম অধ্যায়ে ৩৪ অনুচ্ছেদের (১) অনুযায়ী স্পিকার সংসদ নেতার সাথে পরামর্শক্রমে সংবিধানের ৭৩ অনুচ্ছেদের অধীন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংসদে প্রদত্ত ভাষণে উল্লেখিত বিষয় সমূহের আলোচনার জন্য সময় বরাদ্দ করবেন। এরপর সংসদে কোন সদস্যের মাধ্যমে উত্থাপিত এবং অপর একজন সদস্যের সমর্থিত একটি ধন্যবাদ প্রস্তাবের মাধ্যমে সংসদ উক্ত ভাষণে উল্লেখিত বিষয়সমূহ আলোচনা করবেন।

সংবিধান ও কার্যপ্রাণালী বিধি অনুযায়ী একাদশ সংসদদের ৬ষ্ঠ অধিবেশন অর্থাৎ ২০২০ সালের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে গত ৯ জানুয়ারি সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত ১৪ জানুয়ারি ওই ভাষণের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী। এরপর ওই ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। সরকার ও বিরোধী দলের ২২৭ জন সদস্য প্রায় ৫৫ ঘণ্টা আলোচনা করেন। এরমধ্যে সরকারি দল ১৪ দলীয় জোটের শরিকসহ ২০১ জন সদস্য অংশ গ্রহণ করেন। শুধু আওয়ামী লীগের ১৯২ জন সংসদ সদস্য আলোচনা করেন। এছাড়া ওয়াকার্স পার্টির ৪ জন, জাসদের ২ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের একজন, তরিকত ফেডারেশনের একজন, জাতীয় পার্টি জেপি একজন। আর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ১৮ জন, বিএনপি’র ৫ জন, গণফোরামের ২ জন, একজন স্বতন্ত্রসহ মোট ২৬ জন আলোচনা করেন। বিরোধী দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি সময় পেয়েছে প্রায় ৯ ঘণ্টা। আর বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা আলোচনা করেছেন প্রায় এক ঘণ্টা।

বছরের প্রথম অধিবেশনের ২৮ কার্যদিবসে সবমিলিয়ে ৭টি বিল পাস হয়েছে। অধিবেশনে কার্যপ্রণালী বিধির ৭১ বিধিতে ২৩৫টি নোটিশ পাওয়া যায়। এরমধ্যে ১২টি নোটিশ গ্রহণ করা হয়েছে এবং ৮টি নোটিশ নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ৭১ (ক) বিধিতে দুই মিনিট করে আলোচনার নোটিশ ছিল ৬০টি। এবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরদানের জন্য ১২৪টি প্রশ্ন পাওয়া যায় তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ৫৫টি প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য দুই হাজার ৯০২টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। এরমধ্যে দুই হাজার ২৩৬টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মন্ত্রীগণ।

সংসদ অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণার আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আগামী ২২ ও ২৩ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসবে বলে জানান। এই অধিবেশনের মতো বিশেষ অধিবেশনও সরকার ও বিরোধী দলের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

মূলতবি প্রস্তাব নাকচ : সংসদের চলতি এই অধিবেশনে সাধারণ আলোচনার জন্য দুইটি প্রস্তব পাওয়া যায়। প্রস্তাব দু’টি উত্থাপন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। প্রস্তাব দু’টি ছিলো ‘করোনাভাইরাস নিয়ে আশু করণীয়’ ও ‘ঢাকার বায়ু দুষণ রোধ’ প্রসঙ্গে। ওই বিষয় দু’টি নিয়ে ইতোমধ্যে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রস্তাব দু’টি নাকচ করেন স্পিকার।