চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে চলছে নেতাকর্মীদের উৎসাহ আনন্দের পাশাপাশি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের চরম তৎপরতা।
পাঁচ বছর পর আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিবগঞ্জ উপজেলা সম্মেলন। তিন বছর মেয়াদী দুই সদস্যের কমিটির মেয়াদ পার হয়েছে দুই বছর আগেই। ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপজেলা সম্মেলনে নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি হলেও দায়িত্ব নেয়ার পর বা তারপরও মেয়াদ শেষের দুই বছরে কোনো ইউনিয়ন কমিটি এবং উপজেলা পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি সভাপতি সাবেক এমপি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভকেট আতাউর রহমান।
২০১৩/১৪ সালে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ঘর থেকে বের হতেও পারেনি। অনেকেই চলে যান আত্মগোপনে। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হবার পর এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ইউনিয়ন ও উপজেলার নেতারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হলেও কর্মতৎপরতা শুরু হয়। এরপর ২০১৪ সালের সাত নভেম্বর শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ১১ বছর উপজেলায় সভাপতি ছিলেন প্রয়াত আমিনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মির্জা শাহদাৎ হোসেন খুররম। ২০১৪ সালের পর দলকে বিভক্তি করার অংশ হিসেবে বিভিন্ন গ্রুপ ও উপদল হওয়ার অভিযোগ জৈষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে তোলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
এবারের সম্মেলনে ১৪ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী। তবে এই ১৪ নেতা তিন থেকে চারটি গ্রুপে বিভক্ত। সভাপতি পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ নাজমুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা শাহদাৎ হোসেন খুররম, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভকেট আতাউর রহমান, নাজমুল হক মুক্তা ও বর্তমান এমপি ডাঃ সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলসহ পাঁচজন।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান উপজেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুল ইসলাম টুটুল, বর্তমান সভাপতি গোলাম রাব্বানীর ভাই বেনাউল ইসলাম, সাবেক যুবলীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম, বর্তমান উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি এমদাদুল হক, বিনোদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুল হক, দায়পুকুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আজমল হক বাদশা ও তৌহিদুল আলম টিয়াসহ ৯ জন।
এদিকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এর আগে অনেকবার সুবিধা পাওয়া নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব দিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের অনেক কাউন্সিলর জানান, ইউনিয়ন সভাপতি ও সম্পাদকদের মধ্যে কয়েকজন এর আগেও একটি গ্রুপের বিপক্ষে থাকলেও টাকার বিনিময়ে পরে পক্ষালম্বন করেন। সেদিক থেকে এবারও এক গ্রুপের ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যে অনেকেই কোন দিকে যায় তাও বলা মুসকিল।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, আমি জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর জেলার তিনটি আসনে আমিসহ দুইজন সংসদ সদস্য নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হই। আমার নেতৃত্ব থাকাকালীন সময়ে ২৫ বছর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তিনটি আসনে নৌকার প্রার্থীরা জয় লাভ করে। ২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জেলার কোথাও অন্তর্দন্দ বা গ্রুপিং ছিল না আওয়ামী লীগের মধ্যে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভকেট মিজানুর রহমান জানান, ২৩ ফেব্রুয়ারি শিবগঞ্জ, ২৪ ফেব্রুয়ারি গোমস্তাপুর, ২৫ ফেব্রুয়ারি নাচোল, ২৯ ফেব্রুয়ারি ভোলাহাট, ২ মার্চ সদর এবং ৫ মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
জেলাসহ ছয়টি সম্মেলনে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস, এম কামাল হোসেন, তথ্যমন্ত্রী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান জেলা নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে নির্বাচনের মাধ্যমে না সিলেকশনে কমিটি গঠন করা হবে তা বলতে পারছে না কেউই।
জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে পদ পাওয়া ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শক্তি প্রদর্শন বা সংঘর্ষের আশঙ্কায় শিবগঞ্জ উপজেলা সদর বাদ দিয়ে রানীহাটি উচ্চ বিদ্যালয় ফুটবল মাঠে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত গত বৃহস্পতিবার নেয় জেলা নেতৃবৃন্দরা।