শেখ সবুজ আহমেদ, কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা খোকসা। এই উপজেলাটিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম লগ্ন শুরু হয় মৃত আমানত আলী, মৃত আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, মৃত আব্দুল কুদ্দুস বিশ্বাস, মৃত ডাক্তার রবিউল ইসলাম এবং মৃত আব্দুল গফুর মোল্লা সহ আরো অনেকের হাত ধরেই এবং সেই থেকেই শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল দল’টি কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৭৮ সালের পরে নতুন দল গঠন হলে এখানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শক্তিশালী অবস্থানে যাই। কিন্তু তাতেও খোকসা উপজেলার আওয়ামী লীগকে তারা দুর্বল করতে পারেনি প্রতিটা সময়ে দুই দলেই সমান সমান ভূমিকা পালন করেছে এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দীর্ঘসময় ক্ষমতা থাকায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তৎকালীন আওয়ামী লীগ এর অনেক নেতাকর্মীদের। কিন্তু ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই উপজেলাটিতে বিভিন্ন সময়ে দলটিতে অনুপ্রবেশকারীদের যোগদান শুরু হওয়ার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্রমেই অবহেলার শিকার হচ্ছে।এই দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় অনেক সময় দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র অঙ্গ সংগঠন এর ছাত্রদল,যুবদল এর সক্রিয় নেতা-কর্মীরাই আজ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ও তার অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পদ-পদবিতে ডুকছে। এতে যেমন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে তেমনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর উপজেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছে । এবং এর ফলে নিজেদের মধ্যেই অনেক সময় দেখা যায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা লাগছে। এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীরা মামলা-হামলার শিকার হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে খোকসা উপজেলায় বাংলাদেশ যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে অনেক ছাত্রদল-যুবদল এর সক্রিয় কর্মীরা এই কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছে। এবং কি শুধু অঙ্গসংগঠনে’ই নয় বিএনপি’র সক্রিয় কর্মীরা মূল দলেও প্রবেশ করেছে অনেকেই জানাই এটি।
এ বিষয়ে খোকসা উপজেলার একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যে অবস্থা এটি মোটেও ভালো নয় খোকসা উপজেলা আওয়ামীলীগ’কে আবার সুসংগঠিত করতে হলে অনেক ঘষামাজার প্রয়োজন কারণ হাইব্রিড আওয়ামীলীগের কারণে প্রকৃত আওয়ামীলীগের কর্মীরা আজ পেছনের সারিতে পড়ে আছে। এতে রাগে-ক্ষোভে তারা আজ রাজনীতিকে ঘৃনার চোখে দেখে, যখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল কোন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজের ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি বিভিন্ন মামলা হামলার শিকার হয়েছে, কিন্তু আজ নিজের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেও একই অবস্থা তাহলে রাজনীতি করে লাভ কি আমি দলের হাইকমান্ডের উদ্দেশ্যে বলতে চাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে অনেক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল খোকসা উপজেলার এই প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, এজন্য দল থেকে হাইব্রিড আওয়ামীলীগ বিতাড়িত করুন না হলে রাজনীতির ওপর থেকে সবাই মুখ ঘুরিয়ে নেবে।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ এর কথা’র সঙ্গে অনেকেই একমত পোষণ করেছে কারণ খোকসা’তে এখনো অনেক পরিবার আছে তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জন্য তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিল কিন্তু বর্তমানে সে তাদের পরিবারের কাউকে রাজনীতির সঙ্গে জড়াতে দেয় না। কারণ হাইব্রিড আওয়ামীলীগ এর উৎপাতে তারা আজ দলকে ঘৃণা করে।
খোকসার এই রাজনৈতিক বেহাল দশার সম্পর্কে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান বিটু’র সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, খোকসা উপজেলার রাজনীতির ওপর থেকে অনেকেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে কারণ হাইব্রিড আওয়ামীলীগ এর উৎপাতে প্রকৃত আওয়ামীলীগ’কে মূল্যায়ন করা হয় না। কিন্তু আমরা এর যথাযথ ব্যবস্থা নিব, দলে যারা অনুপ্রবেশকারী আছে এদেরকে অতি দ্রুত ছাঁটাইয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং কেউ যেন দলের নাম ভাঙিয়ে কোন অপরাধ না করতে পারে সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কারণ আমাদের সমাজে মোস্তাকের মত লোকের অভাব নেই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক কোন্দল ও নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এটির অবসান চাই সাধারণ নেতাকর্মীরা কারণ এটির কারণে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
এ বিষয়ে খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক ইতিহাস আছে এরা দলের দুঃসময়ে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অসৎ নেতাদের হাত ধরে দলে কিছু অসৎ ব্যক্তি আসে আর এদের কারণেই আমাদের উপজেলার এই রাজনৈতিক কোন্দল কিন্তু আমরা দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ মেনে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটির অবসানের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি এটি অচিরেই মিটে যাবে এবং দলের যারা অনুপ্রবেশকারী আছে অতি দ্রুত তাদেরকে দল থেকে বের করে দেয়া হবে কারণ একজনের জন্য সবাইকেই খারাপের ভাগিদার হতে হচ্ছে।
খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ বাবুল আক্তারের বক্তব্য কে সাধুবাদ জানিয়েছে, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম এবং তিনি বলেন দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ মেনে আমরা কাজ করব এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করব দলে যেন কোন অনুপ্রবেশকারী প্রবেশ না করতে পারে