দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পায়রা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে আজ রবিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধন করবেন। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে পায়রা সেতুর নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ করতে ৯ বছরের বেশি সময় লেগেছে। সেতুটি চালু করার মধ্য দিয়ে বরিশাল থেকে সড়কপথে পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াতের পথ খুলে যাবে। আর পদ্মা সেতু খুলে দিলে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতও হবে নিরবচ্ছিন্ন।
যোগাযোগব্যবস্থার এমন উন্নতির ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি আসবে বলে ওই অঞ্চলের মানুষ আশা করছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও নান্দনিক নকশার পায়রা সেতু এরই মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
পায়রা সেতু প্রকল্পের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকাল ১০টায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু উদ্বোধন করবেন। এর পরই সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। গণভবন থেকেই অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকবেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ৫০ লাখ মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের একটি হচ্ছে পায়রা সেতু।
সময় ও ব্যয় দুটিই বেড়েছে : প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৮ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ওই সময় পায়রা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কাজ শুরু করতেই চার বছর লেগে যায়। এরপর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনবার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয় এক হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজা, নদীশাসন ও সেতু (অবকাঠামো) নির্মাণে খরচ হয়েছে এক হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, পরামর্শক নিয়োগে দেরি, সেতুর নকশা দুই দফা পরিবর্তন এবং দরপত্রের কাজে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। এ ছাড়া করোনাও একটা কারণ। তবে ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ হলো নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়া। পায়রা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার পায়রা নদের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে চার লেনের পায়রা সেতু।
টোলহার : এই সেতুতে রিকশা, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান, সাইকেল থেকে শুরু করে বাস, ট্রাক ও কনটেইনারবাহী লরিও চলবে। যানভেদে নির্ধারণ করা হয়েছে টোলের হার।
সবচেয়ে বেশি টোল দিতে হবে কনটেইনারবাহী লরিকে, ৯৪০ টাকা। ভারী ট্রাক ৭৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৩৭৫, বড় বাস ৩৪০, ছোট ট্রাক ২৮০, ট্রাক্টর ২২৫, মিনিবাস ১৯০, মাইক্রোবাস ১৫০, পিকআপ ১৫০, প্রাইভেট কার ৯৫, অটোরিকশা ৪০, মোটরসাইকেল ২০ টাকা। রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, ঠেলাগাড়ির জন্য টোল দিতে হবে ১০ টাকা করে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের টোল ও এক্সেল শাখা থেকে টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে।