বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির ছয়জনকে ১০ বছর, চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বরগুনা জেলা শিশু আদালত।
আজ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
যে ছয়জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তারা হলো মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী, মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, মো. আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান, মো. অলিউল্লাহ ওরফে অলি (১৬৪ ধারায় জবানবন্দিদাতা), মো. নাঈম ও মো. তানভীর হোসেন। এদের সবাই বর্তমানে কারাগারে এবং শিশু অপরাধ আইনে এটিই সর্বোচ্চ শাস্তি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পাঁচ বছর সাজাপ্রাপ্ত চার আসামি হলো জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন, মো. নাজমুল হাসান, মো. রাকিবুল হাসান নিয়ামত ও মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ও মহিবুল্লাহ। আর তিন বছর সাজা পাওয়া একমাত্র আসামি প্রিন্স মোল্লা।
মামলায় খালাসপ্রাপ্ত তিন আসামি হলো মারুফ মল্লিক, রাতুল সিকদার জয় এবং মো. আরিয়ান হোসেন শ্রাবন।
এর আগে আজ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ১টা ১০ মিনিটে জেলা শিশু আদালতে এ রায় পড়া শুরু করেন বিচারক মো. হাফিজুর রহমান।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে আসামিদের সকাল সাড়ে ৯টায় কড়া প্রহরার মধ্য দিয়ে আদালতে নেওয়া হয়। এর পর দুপুরে জেলা শিশু আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয় তাদেরকে। এর পরই মামলার রায় পড়া শুরু হয়।
আদালতে মামলার রায় শুনতে হাজির হন রিফাতের পরিবারের সদস্য, মামলার আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী ও আসামিদের স্বজনরা। এ উপলক্ষে আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আদালত চত্বরে ভিড় দেখা যায় উৎসুক মানুষেরও।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় প্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। ৭৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর মোট ৬৩ কার্যদিবসে বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ১৪ অক্টোবর বরগুনা শিশু আদালত এই মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন। এই ১৪ আসামির মধ্যে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে সাত আসামি।
এই রায় নিয়ে নিহত রিফাত শরীফের বাবা আ. হালিম দুলাল শরীফ বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক যে রায় দেওয়া হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এবারের রায়েও প্রকৃত অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে এবং নির্দোষরা খালাস পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
বরগুনার নারী ও শিশু আদালতের পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘এই মামলায় ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যে সাক্ষ্য-প্রমাণ আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি তাতে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।’
গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকেলেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রিফাত শরীফ।
পরে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। তাদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। একই সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।