আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ। সংগ্রামমুখর এক জীবনের চুয়াত্তর বছর পাড়ি দিলেন শেখ হাসিনা, যিনি কাণ্ডারি হয়ে বাংলাদেশ চালাচ্ছেন টানা এক যুগের বেশি সময় ধরে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়।

যে মূলমন্ত্রে জননেত্রী হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনা :

শেখ হাসিনা চল্লিশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটি একটি অনন্য অর্জন এই ৪০ বছর তিনি শুধুমাত্র যে আওয়ামী লীগের সভাপতি আছেন তা নয়, তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত এবং দলের একজন নেতাকর্মী ও মনে করেন না যে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প আছে। এটি একজন রাজনৈতিক নেতার অসাধারণ প্রাপ্তি। তৃণমূল থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মনে করেন শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনাই।

বাংলাদেশের মতো একটি দেশে যেখানে সরকারের জনপ্রিয় থাকা একটি কঠিন ব্যাপার, সেখানে টানা ১২ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রধানমন্ত্রীত্বের সর্বমোট মেয়াদ ১৭ বছরের বেশি। ১৯৯৬ সালের প্রথম তিনি সরকার গঠন করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম দেন শেখ হাসিনা এবং ধীরে ধীরে ২১ বছরের সংগ্রামের পর আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে আসেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ২০০৮ এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি এবং তারপর থেকে পরপর তিনটি নির্বাচনে টানা ক্ষমতায় আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বাংলাদেশ শুধু নয় বিশ্বে ১৭ বছর সরকার প্রধান হিসেবে থাকা একটি বিরল ঘটনা। খুব কম সরকারপ্রধানের এই ধরনের বিরল রেকর্ডের অধিকারী।

আওয়ামী লীগ সভাপতির সাফল্যের একটি বড় দিক হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন বাংলাদেশ ছিলো নিন্ম আয়ের দেশ। সেখান থেকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু থেকে শুরু করে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশকে মনে করা হয় উন্নয়নের রোল মডেল, এটি শেখ হাসিনার নেতৃতেই সম্ভব হয়েছে।

শেখ হাসিনা কেবল বাংলাদেশকে উন্নত এবং অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেননি, বাংলাদেশকে একটা আত্মসম্মান মর্যাদা নিয়ে গেছেন। বিশ্বব্যাংক যখন বাংলাদেশের পদ্মাসেতু নিয়ে আপত্তি ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল তখন প্রধানমন্ত্রী সেই অভিযোগ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে নিজের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন যে পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। বাংলাদেশের বড় একটা বিজ্ঞাপন হল এখন এই নিজের টাকায় পদ্মাসেতু। শুধু পদ্মাসেতু নয়, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান উন্নয়ন এখন বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদার এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছে যেটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অর্জনের একটি অন্যান্য দিক হলো যুদ্ধাপরাধের বিচার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে সমস্ত স্বাধীনতা-বিরোধী রাজাকার, আলবদর গোষ্ঠী বাংলাদেশের মা- বোনদের ধর্ষণ করেছে, নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং অগ্নিসংযোগ লুটপাট করেছে তাদের বিচার ছিল সময়ের দাবি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতিহারে অঙ্গীকার করেছিলেন যে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন এবং এই অঙ্গীকার পূরণ করে তিনি বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন।

৭৫এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই কলঙ্ক উন্মোচন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এটি করতে যেয়ে আইনের দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছেন, প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধুর বিচার শেখ হাসিনার এক অনন্য অর্জন।

এছাড়াও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরো অনেক অর্জন রয়েছে যে অর্জনগুলো তাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে, তাকে করেছ অপরাজেয়। শেখ হাসিনা একজন জননেত্রী থেকে রাষ্ট্রনায়ক রাষ্ট্রনায়ক থেকে এখন বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছেন। এই সামনের দিনগুলোতে হয়তো শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে যাবেন আরো অনেকদূর এগিয়ে এটি দেশবাসীর প্রত্যাশা।

তাঁর দীর্ঘ চালার পথে নাতা ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে তিনি হয়ে উঠেছেন দেশের প্রতিটি মানুষের স্বপ্নদ্রষ্টা।