নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমাণ্য করে ভোলার মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলণকারী বালুদস্যু ও টেন্ডার সন্ত্রাস শামীম-নকিব বাহিনী ও তাদের সহযোগীতাকারী ভোলার দুর্নীতিবাজ ও সদ্য বদলী প্রাপ্ত নিয়োগ বানিজ্যের হোতা জেলা-দায়রা জজ এ,বি,এম মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ভোলার মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে বালুদস্যু শামীম-নকিব বাহিনীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় দুই সাংবাদিকের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার সুষ্ঠু বিচার ও বালুদস্যু, টেন্ডার সন্ত্রাস শামীম-নকিব বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য তদন্ত চিত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে জানা যায়, সাম্প্রতিক কালে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলার মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলণ নিয়ে তদন্ত চিত্র পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে সংবাদ প্রকাশ করলে গত ১৪ আগস্ট ওই পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের মোবাইল ফোনে টেন্ডার সন্ত্রাস জহুরুল ইসলাম নকিব কল করে অকথ্য ভাষা গালিগালাজ করে। ভোলার বালুখেকো এই সন্ত্রাস হুমকি দিয়ে বলেন, আমার হাত অনেক লম্বা, তোরে ঢাকা থেকে তুলে এনে চোখ তুলে ফেলবো। শাহাদাত শাহীন নামে তার বাহিনীর এক সদস্যকে দিয়ে তদন্ত চিত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করবেন বলেও হুমকি দেন জহুরুল ইসলাম নকিব। এ নিয়ে ধানমন্ডি মডেল থানায় ১৬ আগস্ট একটি সাধারণ ডাইরী করা হয়েছে। যাহা ধানমন্ডি মডেল থানার সাধারণ ডাইরী নং- ৭৪৭, তাং-১৬/০৮/২০২১ ইং।

জানা গেছে, সাধারণ ডাইরী করার পরেরদিন ১৭/০৮/২০২১ ইং তারিখ তড়িঘরি করে ভোলার বালুদস্যু ও টেন্ডার সন্ত্রাস জহুরুল ইসলাম নকিব বাদী হয়ে ভোলার বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্ত চিত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে ১ নাম্বার ও ওই পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হুমায়ূন কবিরকে ২ নাম্বার আসামী করে চাঁদাবাজি ও মানহানির ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং এমপি-৩০২/২০২১ (ভোলা), ধারা- পেনাল কোড এর ৩৮৫/৩৮৭/৪৯৯/৫০০/৫০২। আদালত মামলাটি সিআইডি ভোলাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এ মামলাটি করে-ই শামীম-নকিব বাহিনী ক্ষ্যান্ত হননি। পুনরায় একই সংবাদের জেরে উক্ত মামলার চার দিন পর অর্থাৎ ২২/০৮/২০২১ ইং তারিখে পূর্বের মামলার দুই ব্যক্তিকে আসামী করে ভোলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫(১), ২৯(১) ধারায় ভোলার বালুদস্যু শামীম-নকিব বাহিনীর প্রধান জহুরুল ইসলাম নকিবের ডান হাত খ্যাত ভাতিজা আনোয়ার হোসেন (শামীম) বাদী হয়ে আরো একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যাহার মামলা নং সাইবার ট্রাইবুন্যাল ০১/২০২১ ইং।

তদন্ত চিত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অভিযোগে উল্লেখ করেন, উক্ত অভিযোগটি বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ এ.বি.এম মাহমুদুল হক আইনগত ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিজের মনগড়া ও বেআইনীভাবে গ্রহন করে সার্বিক বিবেচনায় অভিযোগটি এজাহার (এফ,আই,আর) হিসাবে গণ্য করে পরবর্তী আইনসঙ্গত পদক্ষেপের জন্য অফিসার ইনচার্জ, সদর থানা, ভোলা-কে নির্দেশ প্রদান করেন। যাহা ইতিহাসে এই প্রথম।

ইতিমধ্যে জেলা ও দায়রা জজ ভোলা-কে নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির কারণে ভোলা থেকে বদলী করা হয়েছে। উল্লেখ থাকে যে, ভোলা আদালতের বিভিন্ন টেন্ডার আনোয়ার হোসেন (শামীম) কে কমিশনের মাধ্যমে দিতেন জেলা ও দায়রা জজ এ,বি,এম মাহমুদুল হক। এসব দুনীর্তি ও নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়ে ভোলার সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এ.বি.এম মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত চিত্রের অনলাইন ভার্সনে ১৮ আগস্ট ২০২১ ইং তারিখে “ভোলার জেলা ও দায়রা জজের বেআইনী কাণ্ডঃ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ ১৮ জন!” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এসব সংবাদ সংক্রান্তে জেলা ও দায়রা জজ এ,বি,এম মাহমুদুল হক এবং শামীম-নকিব বাহিনী ঐক্যবদ্ধ ও যোগসাজসে আদালতের নিয়মের বাহিরে গিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জন্য সংশ্লিষ্ট সাইবার আদালত থাকা সত্ত্বেও জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগটি গ্রহন করে অফিসার ইনচার্জ, সদর থানা, ভোলা-কে এফ,আই,আর হিসাবে গণ্য করে পরবর্তী আইনসঙ্গত পদক্ষেপের জন্য নির্দেশ প্রদান করে, যাহা জেলা ও দায়রা জজ, ভোলার এখতিয়ার বর্হিভুত ও তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশে আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ এবং আইনের নিয়ম ভঙ্গের সামিল বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযোগ থেকে আরো জানা গেছে, গত ১০/০৯/২০২১ ইং তারিখ রাত ৯ঃ৩০ টার সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো পাশে শিল্পকলা একাডেমির রাস্তায় হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার ও নোহা গাড়ীতে শামীম-নকিব বাহিনী এসে তদন্ত চিত্রের সম্পাদককে অপহরণ চেষ্টা করে। এ সময় এ বাহিনী তাঁকে মারধর করে। জহুরল ইসলাম নকিবের নেতৃত্বে আনোয়ার হোসেন (শামীম), সবুজ, খোকন, ইসমাঈল, আলামিন চৌধুরী, টিটু, সিরাজ মাঝি, জিহাদ, নবীর হোসেন ও ফকরুল ইসলাম গাড়ী থেকে নেমে তদন্ত চিত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। এ সময় তারা বলে, তোর কত বড় সাহস, চেয়ারম্যান নকিব ভাইয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ ছাপাও। তোরে আজকে নিয়ে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিব। এ সময় গাড়ীর সামনের সিটে জহুরুল ইসলাম নকিব বসে ছিলেন। তার নির্দেশে আনোয়ার হোসেন শামীম অভিযোগকারীর পেটে পিস্তল ঠেকায়। ঘটনার সময় প্রেসক্লাব থেকে আসা অভিযোগকারীর পরিচিত ৪/৫ জন সহকর্মী এগিয়ে আসে এবং চিৎকার করলে আশেপাশে বেশকিছু রিকসা চালক ও পথচারী এগিয়ে আসলে অপহরণের চেষ্টাকারী সন্ত্রাসীরা গাড়ীতে উঠে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এ নিয়ে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া ও তৎসংলগ্ন সকল নদী হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১ লা ডিসেম্বর জনৈক শেখ ফরিদ নামের এক ব্যক্তি জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। (যার নাম্বার-১১১২৪)। ওই রিটে ভোলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক সেলিম রেজা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাকসুদুর রহমান, ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমান ও ভোলা সদর মডেল থানার তৎকালীন ওসি মোবাশ্বির আলীকে বিবাদী করা হয়। রিট পিটিশনের বিষয়বস্তু নিয়ে বিচারপতি ফরিদ উদ্দিন ও বিচারপতি এমডি রেজাউল হাসানের দ্বৈত বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানী শেষে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ প্রদান করেন। ২০১৫ সালের ২৮ আগষ্ট মাসে ওই আদেশটি ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও বরিশাল এলাকার নদ-নদীগুলোর জন্য বলবৎ থাকবে বলেও হাইকোর্ট নির্দেশনা জারি করেন। তখন ভোলার জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীগন উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞামতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও হাইকোর্টকে অবহিত করেন। ভোলার জেলা প্রশাসক উচ্চ আদালতের সেই আদেশের কপি লক্ষ্মীরের ডিসিকেও অবহিত করেছিলেন। কিন্তু সেই সময়কার দুই জেলার প্রশাসকদ্বয় বদলির পর পরই শামীম-নকীব বাহিনী ফের কমল নগর ও ভোলা এলাকার মেঘনার বুক চিড়ে বালু কাটার কার্যক্রম শুরু করেন। যা এখনো অব্যাহত আছে।

সাংবাদিক জিয়াউর রহমানের গ্রামের বাড়ী ভোলা হওয়াতে শামীম-নকিব বাহিনীর দ্বারা যেকোন সময় জীবন আশংঙ্খা ও গ্রামের বাড়ীতে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদেরও জীবনের নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।