রাকিব হাসানঃ
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে মানবপাচার চক্রের ৮ সদস্য কে গ্রেফতার করেছে র্যাব ৩ এর একটি আভিযানিক দল। র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব ৩ এর অধিনায়ক। তিনি বলেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র্যাব-৩ এ অভিযোগ করেন যে, একটি অসাধু চক্র তাদেরকে ভ্রমণ ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে প্রেরণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভিক্টিমরা বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশ যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং টাকা ফেরত চান। তখন উক্ত মানবপাচারকারী চক্র নকল বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড তৈরি করে ভিক্টিমদের সরবরাহ করে। তাদের দেয়া কার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন করতে গেলে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সদস্যরা ভিক্টিমদের ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড নকল হিসেবে সনাক্ত করেন।
অতঃপর বেশ কয়েকজন ভিকটিমের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে রাজধানীর তুরাগ, উত্তরা, রমনা, পল্টন এবং কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য ১। মোঃ নাইম খান ওরফে লোটাস (৩১),২। মোঃ নুরে আলম শাহরিয়ার (৩২),৩। মোঃ রিমন সরকার (২৫), ৪। মোঃ গোলাম মোস্তফা সুমন (৪০), ৫। মোঃ বদরুল ইসলাম (৩৭), ৬। মোঃ খোরশেদ আলম (২৮) ৭। মোঃ সোহেল (২৭) এবং ৮। মোঃ হাবিব (৩৯) কে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের নিকট থেকে ১। ১৪ টি পাসপোর্ট, ২। ১৪ টি নকল বিএমইটি কার্ড, ৩। ০১ টি সিপিইউ, ৪। ০১ টি প্রিন্টার, ৫। ০১ টি স্ক্যানার, ৬। ০২ বক্স খালি কার্ড, ৭। ০৫ টি মোবাইলফোন, ৮। ০১ টি চেক বই, ৯। ০৫ টি নকল সীল জব্দ করা হয়।
এসময় অধিনায়ক আরও জানান, আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তারা জানতে পারে যে, মোঃ নাইম খান ওরফে লোটাস (৩১) চক্রটির মূল হোতা। সে দুবাই প্রবাসী।এ বছরের মে মাসে সে দেশে ফেরত আসে। সে এইচএসসি পাশ। ২০১২ সালে সে ওয়ার্কপারমিট নিয়ে দুবাই গমন করে। পরবর্তীতে দুবাই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দুবাই শ্রম বাজারে বাংলাদেশী শ্রমিকদের চাহিদা থাকায় দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্রমণ ভিসায় দুবাই অবস্থানকারীদের ওয়ার্কপারমিট দিয়ে কাজের বৈধতা দেয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নাইম মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ে।
সে দুবাইয়ে এবং বাংলাদেশে তার পরিচিতজনদের মাধ্যমে ভিক্টিমদের উচ্চ বেতনে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে দুবাই যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে।কেও রাজী হলে দুই হতে তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে সে তাদেরকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই নিয়ে থাকে। ভ্রমণ ভিসায় যাওয়ার পর কেউ কেউ কাজের সুযোগ পেলেও অধিকাংশই কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। একই ভাবে সে গত ০৭ বছর ধরে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে দুবাই পাচার করেছে।
গ্রেফতারকৃত নাঈম তার পরিচালিত চক্রের মাধ্যমে নকল বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড তৈরি করে এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে বিদেশে পাচার করেছে।