রাজধানীর পল্লবী চান্দারটেক এলাকার মাদকের গড ফাদার, মিনি ক্যাসিনো পরিচালক, ভূমি জালিয়াতি চক্রের হোতা, সন্ত্রাস সৃষ্টি ও গ্রেফতারী নাটকের কারীগর কিলার আমান সভ্য সমাজে এখনো ঘুরছে বুক ফুলিয়ে, প্রকাশ্যে দিবালোকে। যেন তাকে ধরা ছোঁয়ার কেউ নেই? সম্প্রতি মাদকের ওপর জিরো টলারেন্স ঘোষিত হওয়ার পর মিরপুর সার্কেলের ডিসির নির্দেশে অসংখ্য মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হলেও কূখ্যাত ইয়াবা ডিলার কিলার আমান থেকে যায় – বহাল তবিয়তে। এমনকি স্থানীয় পল্লবী থানার কতিপয় পুলিশের সাথেও রয়েছে তার দারুণ সখ্যাতা। ফলে যখন তখন সে দিন কে রাত, আর রাতকে দিন করে দিতে পারে থানা পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিতর্কীত নীতির কারণে।

কয়েক বছর আগেও ডোবা নালা ও সরকারি পরিত্যক্ত জলাশয়ে মাছ চাষ করে খেত এই ইয়াবা আমান। তখন তার নাম ছিলো নিকিরী আমান। এরপর এ এলাকায় ক্রসফায়ারে নিহত এক সন্ত্রাসীর ডেরায় যাতায়াতের সুযোগে সে পেয়ে যায় বোমা গোলা বারুদের স্বাদ।

 এরপর আস্তে আস্তে জড়িয়ে পড়ে নিষিদ্ধ জগতে। টাকার নেশায় করতে থাকে নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।ভাড়ার বিনিময়ে বা কন্ট্রাকেও সে এ এলাকা ছাড়াও এলাকার বাইরে যেয়েও খুন জখম লুটতরাজ নারী ধর্ষণ ও অপহরণেও সে নিজিকে জড়িয়ে ফেলে নিবীরভাবে। পল্লবী চান্দারটেক সিরামিক কালশী এলাকাতেও সে গড়ে তুলে নিজস্ব মাদক ও জুয়াড় সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসের গ্যাং গ্রুপ।

ইতোমধ্যে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কিছু চোরাকারবারীর সাথে সখ্যতার কারণে সে উল্লেখিত এলাকার ইয়াবা হেরোইন ফেন্সিডিল মদ গাঁজা ও নিষিদ্ধ ইনজেকশন মাদকের শীর্ষ সম্রাট হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে।এক দু হাজার বা ১০/২০ হাজার বা তার বেশি ইয়াবা কিনতে হলেই তাকে আসতে হবে নিকিরী আমান বা কিলার আমানের কাছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১১ নম্বরের একজন মাঝারি মাপের ইয়াবা ব্যবসায়ী বলেছেন, পাইকারী মাল(ইয়াবা) নিলে অন্য ডিলারদের থেকে আমান ভাইয়ের রেট কম, আর মালটাও দেয় জেনুইন, তাই আমি বেশি মাল কিনলে আমান ভাইয়ের কাছে চান্দারটেক বা সিরামিকের ভিতরে চলে আসি। তাছাড়া আমান ভাই নিজেও ডেলি চার পাঁচ বার ইয়াবা গলায়, তাই সে ভালো মন্দর পার্থক্যটা বুঝে ভালোভাবেই।

এদিকে সিরামিকের ভিতরে আমানের সাম্রাজ্য আরো মজবুত হচ্ছে দিনকে দিন। সিরামিক কর্তৃপক্ষ তার বিরূদ্ধে কোন টু শব্দটি না করার কারণে এ এলাকাও তার সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে, সিরামিকের কারখানা আর রুমগুলোও তার দুর্গে পরিনত হয়েছে। কিলার আমান এখানে বিভিন্ন  পয়েন্ট সিসি ক্যামেরা সেট করে চালাচ্ছে মাদকের কারবার, আর মিনি ক্যাসিনোর নামে রমরমা জুয়াড় আসর।সে এখানে নিজেও প্রকাশ্যে ইয়াবা হেরোইন সেবন করে থাকে। আর কথিত ভিআইপি কাস্টমারদের জন্যও এখানে আছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ইয়াবা সেবনের ব্যবস্থা।পাইকারী ইয়াবা যারা কিনতে আসে, তারাও এখানে মাল যাচাই বাছাইয়ের নামে ইচ্ছে মতো ইয়াবা সেবন করতে পারে।

এ সিরামিকের ভিতরে যৌথবাহিনী বা র‌্যাবের চৌকস কোন টিম যাতে ঝটিকা অভিযান চালতে না পারে সেজন্য সিরামিকের ভিতরে বাইরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো আছে সিসি ক্যামেরা।আর নিজের রুমে মনিটর লাগিয়ে আমন সব সিসি ক্যামেরার গতিবিধি সে রেখেছে চোখে চোখে।আর এখানে বসেই স্থানীয় থানা ও তার পছন্দের ব্যক্তিদের সাথে সে যাবতীয় তথ্য আদান প্রদান করে হোয়াটস্ এ্যাপের মাধ্যমে।আমানের এই ক্যামেরা মনিটরিং রুমের ওয়ালে টাঙানো হয়েছে অতি যত্নে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। প্রথম প্রথম দেখলে যে কেউ ভাববে হয়তোবা কিলার অমান একজন সাচ্চা দ্রেশপ্রেমী মানুষ, তাই হয়তোবা ঐ ছবি দুটো লাগিয়েছে ভালবাসা ও দেশপ্রেমের টানে। কিন্তু ওসব প্রেমট্রেম কিছুই নয়। আসলে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির পিছন দিয়ে রয়েছে গোপন একটি চোরই পথ।যদি কখনো সিসি ক্যামেরা কাজ না করে, বা হঠাৎ যদি বিশেষ কোন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চলে আসে  দরজার সামনে—তখন সবার চোখে ধূলো দিয়ে আমান পালিয়ে যাবে ঐ চোরা রাস্তা দিয়ে।

তবে বিশ্বস্থ সূত্র বলছে এলাকাটি পল্লবী থানার আওতাধীন হলেও পল্লবী যে অভিযান চালাবেনা সে বিশ্বাস তার দৃঢ়।

কারণ হিসাবে ঐ সূত্র বলছে, পল্লবী থানার বেশ কজন অফিসারের সাথে রযেছে তার দারুণ সখ্যতা। তাই কেউ এ থানা থেকে অভিযানে গেলেও তা আমানের কানে পৌঁছে যাবে তক্ষণি। তাই পল্লবী থানাকে নিয়ে কোন টেনশন নেই আমানের। বরং সে এলাকায় তার বিরুদ্ধচ্চারণকারীদের বিভিন্ন ভাবে তার এই খাতিরে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার নাটক সাজিয়ে হাতিয়ে নেই টাকা। মোট কথা কারো উপর রাগ হলে সে নিজেই দেয় মামলা, করাই গ্রেফতার। আবার উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাওয়া মাত্র তার নির্দেশে সব অভিযোগ হাওয়ায় উড়ে যায়, আটক ব্যক্তিও হয়ে যায় মুক্ত।

এদিকে সিরামিকের ভিতর থেকে আমান তার সেকেন্ড ইন কমান্ড শফিকের মাধ্যমে সেগুন সহ  অসংখ্য দামী দামী গাছ কেটে বাইরে বিক্রি করে সে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় দু কোটি টাকা।আর গাছগুলো পানির চার আঙুল নিচ থেকে এমনভাবে কৌশলে কাটা হয়েছে হঠাৎ দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেনা যে, এখানে কখনো কোন গাছ ছিলো। এই গাছ চুরির টাকা আর মাদকের টাকা দিয়ে কারিগরী এলাকায় চলছে তার ৬ তলা ফাউন্ডেশনের বিলাসবহুল বাড়ির নির্মাণ কাজ। যে বাড়িটি প্রায় তিন তলা পর্যন্ত ইতোমধ্যে হয়েছে কমপ্লিট।ঐ বাড়ির দরজা জানালার চৌকাঠ সহ যাবতীয় কাঠের কাজ চলছে সিরামিকের ভিতর থেকে চুরি করা গাছ দিয়েই।অপরকে তার এ বাড়ি তৈরির নির্মাণ সামগ্রীর সিংহ ভাগই এই সিরামিকের ভিতর থেকে চুরি করে নিয়ে ঐ বাড়িতে লাগানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সূত্র বলছে, বাড়ি প্রায় তিনতলা কমপ্লিট হয়ে গেলেও আমানের কাছে নেই কোন লিগ্যাল দোকানের রড সিমেন্ট বা নির্মাণ সামগ্রী ক্রয়ের কোন ভাউচার।উল্লেখ্য যে, কিলার আমানের নামে বর্তমানে মিরপুর পল্লবী থানায় হত্যা,  হত্যা প্রচেষ্টা, চাঁদাবাজি, শিশু নির‌্যাতন, আগ্নেও অস্ত্র প্রদর্শন, জোর দখল সহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৪ টি মামলা ও ৯টি জিডি রয়েছে।

মামলার তালিকাঃ ২৪০, ৭৩/৬০৩, ৫১(৫) ১০, ৪৬(১)০৪, ২১(৩)০৪, ২০(১)০৩, ৪০(১০)৯৯, ১৫(৩)০৪, ৪৭(৯)৯৯, ৩৮(১০)৯৭, ৪(১), ৬, ৩৪, ৩৭ ।

জিডির তালিকাঃ ১৯০৩, ৮৭৭, ২০৭৯, ২৫, ২৯২, ৩১, ১২৮৮, ৫৪০, ৭১১ ।

News source