রাকিব হাসানঃ

৫ বছরের শিশু সানি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে  হত্যাকান্ডের মূল আসামীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গােয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ।
গ্রেফতারকৃত আসামী মােঃ চান মিয়া শিশুটির সম্পর্কে আপন খালু। চান মিয়ার জীবিকা নির্বাহের নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই।

রাজধানীর গেলাপশাহ মাজার, গুলিস্তান এলাকায় চুরি-ছিনতাই করাই ছিল তার মূল পেশা। চুরি ছিনতাই করতে গিয়ে একই এলাকার ল্যাংড়া রাসেল গ্রপের সাথে তার দন্দ তৈরি হয়। শত্রুতার জের ধরে ল্যাংড়া রাসেলকে মিথ্যা মামলায় ফাসানাের জন্য সে বেছে নেয় নিজ শ্যালিকার ৫ বছরের শিশু ছেলে সানিকে। পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে নাটক সাজিয়ে মামলা দেওয়া হয় ল্যাংড়া রাসেলসহ গ্রুপের অন্যদের বিরুদ্ধে।

 গতকল আনুমানিক সকাল ১১ টায় পল্টন এলাকার বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি।ঘটনার বিবরনে গোয়েন্দা প্রধান হাফিজ আক্তার জানান, শিশু সানি গত ০৯/১১/২০১৯  তারিখ রাতে নিখোঁজ হলে তার মা ঝর্ণা বেগম  পরেরদিন ১০/১১/২০১৯ তারিখ সকালে তার বােন জামাই মােঃ চান মিয়াকে বিষয়টি জানায়। এরপর ঐইদিনই রাত অনুমানিক রাত ০৯ টায় চান মিয়া’র মাধ্যমে ঝর্ণা বেগম সংবাদ পান পল্টন মডেল থানা এলাকার বঙ্গভবনের কোনায় পুলিশ বক্সের সামনে শিশু সানির বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া গেছে। পরদিন পল্টন মডেল থানায় সানির মা ঝর্ণা বেগম চান মিয়ার সহায়তায় ১। ল্যাংড়া রাসেল, ২। পিন্টু, ৩। জুয়েল, ৪। কালাম, ৫। পায়েল এবং ৬। ইরা এর নাম দিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে পল্টন থানাপুলিশ তদন্ত করে এবং পরবর্তীতে মামলাটি গােয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের উপর ন্যাস্ত হয়।
গোয়েন্দাদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে চান মিয়া হত্যাকান্ডের লোহমর্শক ঘটনার বর্ননা দেয়। গোয়েন্দা প্রধান সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য সাংবাদিক দের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন ঘটনার আগের দিন রাতে চান মিয়া শিশু সানিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।ঘটনার দিন বিকেল বেলায় ফুটপাত থেকে ৬০ টাকা দিয়ে সে একটি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ক্রয় করে। এরপর অনুমানিক সন্ধ্যা ০৭ টায় স্টেডিয়াম এলাকা হতে ৫০ টাকা দিয়ে ৫টি ঘুমের ঔষধ ক্রয় করে এবং ঔষধ গুলো একটি ফ্রুটো জুস ক্রয় করে জুসের সাথেমিশিয়ে দেয়। চান মিয়া যৌন উন্তেজক ট্যাবলেট খেয়ে নেয়। অনুমানিক রাত সাড়ে ১০ টায় শিশু সানিকে স্টেডিয়ামের ২নং ও ৩নং গেইটের মাঝামাঝি ঝর্ণার পাশে অন্যান্য পথশিশুদের সাথে খেলতে দেখে ডেকে নিয়ে যায় চান মিয়া। সেখানে চান মিয়া পরিকল্পনামাফিক ঘুমের ঔষধ মেশানাে জুস খাইয়ে দেয় সানিকে। সানি জুসটি খাওয়ার পর আন্তে আন্তে দুর্বল হয়ে পড়লে চান মিয়া শিশুটিকে গুলিস্থান পার্ক এলাকায় এক নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সময় সুযোগ বুঝে চান মিয়া সানিকে পাশবিক বলাৎকার শুরু করে। সে সময় শিশু সানি ব্যথা অনুভব করে শরীরে মােচড় দেয়, সেই সময় চান মিয়া শিশুটির গলা টিপে ধরে রাখলে সানির মৃত্যু ঘটে।

শিশু সানি’র মৃত্যু নিশ্চিত করার পর শিশু সানির লাশের সহিত পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে যৌন কামনা পূরন করে। এর পর চান মিয়া নিজেই লাশ বস্তাবন্দি করে রাতে বঙ্গভবন পুলিশ বক্সের সামনে ফেলে যায়। স্থানীয়রা বস্তাবন্দী লাশ দেখে থানায় খবর দিলে পল্টন থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে প্রেরন করে। ময়নাতদন্তে বিকৃত যৌনাচারের বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। মামলার তদন্ত শুরু হলেও করোনা মহামারী তে সারাদেশ অচল হয়ে পড়ায় পল্টন থানা পুলিশ বেশি অগ্রসর হতে পারেনি। পরবর্তীতে মামলা ডিবি তে স্থানান্তর হয়। ডিবি পুলিশের অনুসন্ধানেও প্রায় ২ বছর সময় লেগে যায়। তারা একটি কালো গেন্জির সন্ধান পায় এবং সেই গেন্জীর সূত্র ধরেই চান মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে চান মিয়া বিকৃত যৌনাচারের নেশার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আজ তাকে আদালতে প্রেরন করে রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে মনে করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।