চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের একটি জালিয়াত চক্র গত দেড় বছরে দুই হাজারের বেশি লোকের হাতে ‘জাল জাতীয় পরিচয়পত্র’ তুলে দিয়েছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশনের কারিগরি তদন্ত দল।
এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অনুসন্ধান চালিয়ে এই তদন্ত দল জানতে পেরেছে, নির্বাচন কমিশনের কিছু কর্মচারী এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের সহযোগিতায় এই জালিয়াতি চালিয়ে আসছে ওই চক্রটি।
ফলে নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কার্যালয়ে না গিয়েও নিবন্ধন ফরম পূরণ, ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ নেওয়া এবং কেন্দ্রীয় অফিসে অসম্পূর্ণ তথ্য পাঠিয়েও জাল জাতীয় পরিচয়পত্র বের করে আনার কাজটি তারা নির্বিঘ্নেই সারতে পারছিল।
২০১৬ সালে ইস্যু করা এনআইডির আদলে কার্ড বানিয়ে ১৫ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকার বিনিময়ে তারা দালালের হাতে তুলে দিত। আর এ কাজে ইসির হারানো অন্তত দুটি ল্যাপটপ ব্যবহার করা হয়েছে বলে তদন্ত দলের ধারণা।
এক রোহিঙ্গা নারী ভুয়া এনআইডি সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে পাসপোর্ট নিতে গিয়ে ধরা পড়ার পর জালিয়াত চক্রের খোঁজে নামে নির্বাচন কমিশন। রোহিঙ্গা সন্দেহে অর্ধশত এনআইডি বিতরণ আটকে দেয় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ।
এরই মধ্যে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার অফিস সহায়কসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার পুরো জালিয়াত চক্র ধরা পড়বে। এ ধরনের অপরাধমূলক কাজে অসাধু অফিস স্টাফ, প্রকল্পের কিছু সাপোর্ট স্টাফ ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের যোগসাজশ থাকতে পারে। এজন্য বর্তমানে যারা কাজ করছে, তাদের পাশাপাশি অতীতে যারা এনআইডি প্রকল্পে কাজ করেছিল, নানা কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছে, চাকরি ছেড়েছে তাদের বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়ও ওই চক্র ভুয়া তথ্য দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ নিয়ে থাকতে পারে- এমন সন্দেহে নিবন্ধনের কাজ সম্পৃক্তদের সবার নামের তালিকা ও কাজের খতিয়ান পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানান মহাপরিচালক।
২০০৭-২০০৮ সালে দেশে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু হয়। এক যুগে ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি নাগরিক, যাদের তথ্য ইসির ডেটাবেইজে রয়েছে। আরও ৮০ লাখ ভোটারযোগ্য নাগরিকের তথ্য হালনাগাদের কাজ চলছে। আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত এ কাজ চলবে।
প্রতিবছর হালনাগাদ কাজের সময় তথ্য সংগ্রহ থেকে ডেটা এন্ট্রি পর্যন্ত লাখো লোকবল সম্পৃক্ত করতে হয় ইসিকে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, “আমরা এখন সবাইকে চাপে রেখেছি। প্রকল্পের ১ হাজার ৪৫৩ জন লোকবল, ইসি সচিবালয় ও মাঠ পর্যায় মিলিয়ে দুই সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এখন মনিটরিংয়ে রেখেছি। কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে জালিয়াত চক্রে কারা, কীভাবে সম্পৃক্ত থাকতে পারে তা যাচাই চলছে। সন্দেহভাজন সাবেকদের তালিকাও করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাব।”