ক্যাসিনো পণ্যসামগ্রী আমদানির পর তা খালাস হয় কমলাপুর আইসিডি ও পানগাঁও কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজশে। এসব পণ্য খালাসে অবৈধ সহায়তা করে তারা বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার কাছ থেকে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। খালেদ নিজেই এ কাজে দেনদরবার করতেন। এসব কাজে সিএন্ডএফ এজেন্ট হিসেবে যারা কাজ করেছেন তারাও দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আর এসব কাস্টমস কর্মকর্তাদের টাকা ও সম্পদের পরিমাণ দেখে বিস্মিত অনুসন্ধানকারীরাও।
বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণসহ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, খালেদের আমদানি করা ক্যাসিনোপণ্যের ৭০ শতাংশ কমলাপুর আইসিডি এবং কেরানীগঞ্জ পানগাঁও থেকে ২৫ শতাংশ খালাস করা হয়। আর এতে কমলাপুর আইসিডি কাস্টমস কমিশনার মো. আনোয়ার হোসাইন, অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মাদ মাহমুদুল হাসান, প্রিভেন্টিভ টিমের সহকারী কমিশনার (এসি) কানিজ ফারহানা শিমু, এসি আবুল কাসেম ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (ইনস্পেক্টর) তুহিনুল হক যুক্ত ছিলেন।
পণ্যগুলো খালাস করে সিএন্ডএফ এজেন্ট এস.টি বাংলাদেশ লিমিটেড ট্রেডিং, সুগন্ধা ইন্টারন্যাশনাল ও এম.এম ইন্টারন্যাশনাল এবং বেত্রাবতী ট্রেড। এর মধ্যে সিএন্ডএফ এজেন্ট এস.টি বাংলাদেশ লিমিটেড ট্রেডিংয়ের মালিক লাভলু, সুগন্ধা ইন্টারন্যাশনাল ও এম.এম ইন্টারন্যাশনালের মালিক ফরহাদ হোসেন এবং বেত্রাবতী ট্রেডের মালিক আশরাফ খালেদের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহচর।
ক্যাসিনো কিং সম্রাটের হয়ে এসব পণ্য আমদানির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন খালেদ। নিয়মিতই তিনি আইসিডি ও পানগাঁও কাস্টমস অফিসে যেতেন। সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অভিযুক্ত কাস্টমস কর্মকর্তাদের অফিসে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটাতেও দেখা গেছে তাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাস্টমস কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের বদলি ঠেকাতে খালেদ ৩ কোটি টাকা খরচ করেন। আর ইনস্পেক্টর তুহিনুল হকের নামে-বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমদানি পণ্যের মধ্যে ছিল ক্যাসিনো কয়েন, মাহাজং গেম, মেশিন, গেম টেবিল। কন্টেইনারের সিল ভেঙে সঙ্গে সঙ্গেই তা লুকিয়ে ফেলা হতো। খালেদের নেটওয়ার্কে থাকা তিন সিএন্ডএফ এজেন্ট একই দিনে ডকুমেন্ট এন্ট্রি করে পণ্যের কোনো কায়িক পরীক্ষা ছাড়াই রাতারাতি তা খালাস করে নিত। এ জন্য প্রতিদিন কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিপুল টাকা ঘুষ দিত এজেন্টগুলো।
জানা গেছে, নিজের ও ভাড়া করা লাইসেন্স দিয়ে কাজ করা এই তিন সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কোনো শুল্ক পরিশোধের ফাইল পর্যন্ত নেই। শিপিং লাইনের ডি/ও এর সঙ্গে বিল অফ অ্যান্ট্রির কোনো মিল নেই। এ ছাড়া ডেলিভারি চালানের সঙ্গে ট্রাক নম্বরেরও মিল থাকে না। ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েই চলছে এসব সিএন্ডএফ এজেন্ট। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর আইসিডি কাস্টমস কমিশনার মো. আনোয়ার হোসাইন আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি এসব কিছু জানি না। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাব। প্রথমে খালেদ মাহমুদ এবং পরে গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে। এর পরই বেরিয়ে আসে ক্যাসিনো রাজ্যের আদ্যোপান্ত। মূলত ঢাকায় ক্যাসিনো বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল সম্রাটের হাতে। বিশ^স্ত সহযোগী খালেদকে দিয়েই তিনি সব দেখভাল করতেন।