জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। ক্লাস বর্জন, ভাঙচুর, অবরোধ চলছে। অপরাধী যারাই হোক না কেন আমি কিন্তু সব অপরাধীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেই। হঠাৎ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কিছু হলেই ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন। আর ভিসিকে দুর্নীতিবাজ বলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটা স্পষ্ট কথা- যারা দুর্নীতির অভিযোগ আনছেন তাদের কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। তাদের তথ্য দিতে হবে। তারা যদি তথ্য দিতে পারেন তাহলে নিশ্চয়ই আমরা ব্যবস্থা নেব। কিন্তু যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে না পারেন। সময় নষ্ট করবেন, ক্লাস চলতে দেবেন না, ভিসির বাড়িতে, অফিসে আক্রমণ, ভাঙচুর করবেন, দিনের পর দিন ক্লাস বন্ধ থাকবে এটা তো হয় না। প্রমাণ করতে হবে। যদি কেউ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন তাহলে দুর্নীতি করলে যে সাজা হতো তাকে কিন্তু সেই সাজা পেতে হবে। এটি কিন্তু আইনেও আছে মিথ্যা অভিযোগ করলে আইন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমরা কিন্তু সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। যারা কথা বলছে, বক্তৃতা করছে, আন্দোলন করেছে সব রেকর্ড থাকবে। তারা যদি প্রমাণ করতে না পারে, মিথ্যা অভিযোগের জন্য তার শাস্তি হবে। এভাবে দিনের পর দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, সেটা কিন্তু আমরা বরদাসত করবো না।
প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দুস্থ ও অসচ্ছল সাংবাদিকদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ (বৃহস্পতিবার) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক আর্থিক সহায়তা-ভাতা অনুদানের চেক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর থেকে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। আজকে এতগুলো টিভি চ্যানেল, আগে একটিমাত্র টিভি চ্যানেল ছিল। এতগুলো চ্যানেলের ফলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আজকে প্রায় ৪৪টি চ্যানেল অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২৪টি চ্যানেল ইতোমধ্যে চলছে। সেখানে কত কর্মসংস্থান, কাজর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আবার সেখানে মধ্য রাতে ট শো চলে। সেখানে অনেক কথা বলার পরেও তারা বলে আমারা কথা বলার অধিকার নেই। আমরা তথ্য অধিকার আইন করে তথ্য কমিশন গঠন করেছি। সেখানে যে কেউ যেকোনো তথ্য পেতে পারে। এই সুযোগ কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যত বেশি সুযোগ দেয় তত বেশি সমালোচানার শিকার হয়। আগে কথাও বলতে পারতো না, সমালোচনা করতেও পারত না।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ আর্থসামাজিকভাবে উন্নতি করেছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে, সব দিক থেকে দেশের উন্নতি হয়েছে, তাহেল অভিযোগটা কী? আমারা তো কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মেট্রোরেলের কাজ করছি, এখানে স্টেশন হতে পারবে না, ওখানে হতে পারবে না। যাদের সুবিধার জন্য তারাই সেখানে আন্দোলন করে স্টেশন হতে দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিতে কাজ করতে হলে তো কতগুলো নিয়ম মানতেই হবে। তাদের অসুবিধাটা কোথায়? তারা ট্রেন থেকে নেমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে চলে যাবে। আর তারাই যদি বাধা দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে ডেভলেপমেন্টটা হবে কীভাবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩তে উঠে গেছে, স্বল্পন্নত উন্নয়নশীল দেশে আমরা অগ্রযাত্রা শুরু করেছি। অনেকের কাছে এটা হয়তো পছন্দ হবে না। কারণ ৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পরে বাংলাদেশকে পিছনে টেনে রাখতে সক্ষম হয়েছিল তারা। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আর তা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেখানেই বোধহয় তাদের মনে কষ্ট।
তিনি বলেন, রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুলে যে ঘটনাটা ঘটলো, যারা অনুষ্ঠান করে তাদের তো একটা দায়িত্ববোধ থাকে। যারা স্কুলের মাঠে অনুষ্ঠান করছে তাদের ওই বাচ্চাদের সেফটি সিকিউরিটির দিকে দেখা উচিত ছিল। তারা এতটাই নেগলেট করেছে যে ইলেকট্রিক কারণে মারা গেছে বাচ্চাটা। ধানমন্ডির ওই এলাকায় কতগুলো হাসপাতাল, কিন্তু সেগুলোতে না নিয়ে মহাখালী একটি হাসপাতালে নিয়ে গেছে। ইলেকট্রিকের ওই বিষয়গুলোর দিকে তারা দৃষ্টিই দেইনি। এত অবহেলা কীভাবে করতে পারে। তারা অনুষ্ঠান করেছেন, তাদের কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই? এটি তাদের একটি গর্হিত অপরাধ। এভাবে একটা বাচ্চা মারা যাবে এটা তো বরদাসত করা যায় না।