মাহফুজ বাবু
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় বন্ধ হচ্ছে না গ্যাস চুরি
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট র্যাব ও পুলিশের উপস্থিতিতে ৬ মাস আগে বিচ্ছিন্ন করা অবৈধ সংযোগটি সোমবার (০৯ডিসেম্বর) দুপুরে আবারো বিচ্ছিন্ন করলো কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। জেলার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়ন এলাকার কোরপাই সাদাত জুট মিল গেইট ও নয়াকামতা এলাকার প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সহস্রাধিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এসময়। জানা যায়, সাদাত জুট মিল সংলগ্ন একটি ডমেস্টিক লাইলের মেইন পাইপ থেকে অবৈধ উপায়ে ছিদ্র করে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিচে দিয়ে অবৈধ সংযোগটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে কয়েক গ্রামের মানুষ। গত ৬মাস পূর্বে একইভাবে এই অবৈধ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ গ্যাস চোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ না করায় বিচ্ছিন্নের দু’দিন পরই পুনরায় অবৈধ সংযোগটি চালু হয়। অবৈধ গ্যাস ব্যাবহারকারী স্থানীয় গ্রাহক অবঃ সেনা সদস্য সামসুল হক, তুষার সহ এলাকাবাসী জানান, বাখরাবাদ ট্যাকনিশিয়ান বাহার, ঠিকাদার হাজী জসিম, বাখরাবাদের ঠিকাদারের সহকারী ফারুক ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ দাতা কমিটির স্থানীয় এলাকার সোহেল ভূইয়া, টুটুল ভূইয়া, সেলিম ভূইয়া, কাজী রহমত, গাজী সালাম, গাজী তাহের, মোবারক মেম্বার , রিপন কাজী, বাবুল কাজী ও কাজী মতিন সহ আরো কয়েকজনের একটি সিন্ডিকেট রাইজার প্রতি ৪০-৫০ হাজার টাকা করে গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়ে পরবর্তীতে বৈধতা হবে বলে অবৈধ সংযোগ প্রদান করে। সংযোগ বিচ্ছিন্নকালে বাখরাবাদ কর্মকর্তাদের সামনেই তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, যারা টাকা নিয়ে সংযোগ দিয়েছে তাদের কয়েকজন এখানেই উপস্থিত রয়েছে। টাকা নেয়ার অভিযোগ করে এসময় অবৈধ গ্যাস গ্রাহকদের স্থানীয় কয়েকজন বাখরাবাদ ট্যাকনিশিয়ান বাহার ও ঠিকাদার সহকারী ফারুকের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পরে। এলাকাবাসী অভিযোগ, কয়েক মাস পরপর টাকা নিয়ে যারা সংযোগ দেয় তারাই আবার অবৈধ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। আমরা অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করতে চাই না। বৈধতা দেয়া হবে বলে আমাদের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নিয়ে সংযোগ দেয়া হয়েছে। আমাদেরকে বৈধ উপায়ে গ্যাস দেয়া হোক। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় ঘনবসতিপূর্ণ নয়াকামতা ও মিল গেইট এলাকার সহস্রাধিক অবৈধ সংযোগের বিনিময়ে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে গ্যাস চোর চক্রটি। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর চোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর কোন আইনানুগ ব্যবস্থা বা যথাযথা পদক্ষেপ না নেয়ায় কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লোপাটকারী দুর্নীতিবাজরা যেমন পার পেয়ে যায়। তেমনি কিছুদিন পরপরই একই সংযোগ বারবার বিচ্ছিন্ন করাতে বাখরাবাদের গোল্লাছুট খেলা বন্ধ হচ্ছে না। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাখরাবাদের ট্যাকনিশিয়ান বাহার বলেন, “আমি কিছু বলতে পারবো না, আমাদের স্যাররা আছে এখানে তাদের সাথে কথা বলেন। আমি কোন টাকাটুকা নিছিনা ” এলাকাবাসীর রোষানলে পরা আরেক জন ঠিকাদার সহকারী পাবনা জেলার ফারুক মিয়া তিনি বলেন, ”অবৈধ সংযোগ দেয়া টাকা নেয়া কোনটার সাথেই আনি জড়িত নই। এর আগেও এলাকায় এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় আমি এসেছিলাম। যারা অবৈধ সংযোগ দিয়েছে তাদের কেউ শত্রুতা মুলক ভাবে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা কথা বলে থাকতে পারে। এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ”
বাখরাবাদের ম্যানেজার (ভিজিল্যান্স) আবু জাফর বলেন, এর আগেও এই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সংযোগটি বিচ্ছিন্নের কয়েকদিন পর আবারো নুতুন করে সংযোগ চালু করে কতিপয় অসাধু লোকজন। বাখারাবাদের কেউ এসবের সাথে জড়িত থাকলে লিখিত ভাবে কেউ অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে সত্যতা যাচাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবৈধ সংযোগ দাতা ও এসবের সাথে জড়িতদের বিস্তারিত তথ্য জানা গেলে বাখরাবাদের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হবে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন বুড়িচং উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ( সহকারী কমিশনার ভূমি ) তাহমিদা আকতার। এছাড়াও এসময় উপস্থিত ছিলেন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ এর ম্যানেজার (ভিজিল্যান্স) মোঃ আবু জাফর, ইন্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ম্যানেজার কিশোর দত্ত, ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন আহাম্মদ, র্যাব ১১ সিপিসি ২ ও বুড়িচং থানা পুলিশের একাধিক টিম।