নিউজ ডেক্স
রাজধানীর মিরপুরে দীর্ঘদিন যাবত কথিত সম্পাদকও সাংবাদিক পরিচয়ে ১ ডজন মামলার আসামী, গোটা মিরপুর এলাকার চিহ্নিত ভয়ংকর সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজ,ছিনতাইকারী সিন্ডিকেট ও দেহব্যবসায়ী চক্রের গডফাদার , প্রতারক জাকির হোসেন ওরফে কালা জাকিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মিরপুরবাসী।
দৈনিক খবর বাংলাদেশ নামক নামসর্বস্ব একটি পত্রিকা ও চ্যানেল বাংলা নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলের কথিত সম্পাদক ও মিরপুর প্রেসক্লাবের স্বঘোষিত সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে প্রেসক্লাবের নাম ভাঙ্গিয়ে চিহ্নিত অপরাধী কালা জাকিরের এহেন ঘৃন্য কর্মকান্ডে বিব্রত ও ক্ষিপ্ত গোটা মিরপুরের সাংবাদিক সমাজসহ স্থানীয় প্রশাসন।
তবে হাস্যকর ব্যপার হচ্ছে, নামসর্বস্ব খবর বাংলাদেশ পত্রিকা ও চ্যানেল বাংলা ইউটিউব চ্যানেলের কখনো কখনো তিনিই সম্পাদক,তিনই সিনিয়র রিপোর্টার ও সংবাদ উপাস্থাপক হিসেবে নিজেকে বিভিন্ন জায়গায় জাহির করেন। কখনো বা কোনোদিনই তিনি দেশের জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন মাছরাঙা টিভিতে কাজ না করলেও প্রায়ই তাকে মাছরাঙা টিভির লোগো সম্বলিত বুম ও স্টিকারযুক্ত ক্যামেরা নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের নামে চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়। অবশ্য মাছরাঙা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন,জাকির হোসেন নামে তাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো সাংবাদিকই নেই।
চিহ্নিত এই নামধারী সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে কুখ্যাত সন্ত্রাসী,দেহব্যবসায়ী চক্রের গডফাদার কালা জাকির মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার গোবরনাদা গ্রামের ইশারত আলীর ছেলে।
অভিযোগ উঠেছে, মিরপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের স্বপ্নের সংগঠন ও ঐতিহ্যবাহী মিরপুর প্রেসক্লাবটির কার্যক্রম বিশেষ কারনে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সুচতুর ও ধুরন্ধর কালা জাকির তার নিজস্ব অপরাধী সিন্ডিকেটের কিছু অপেশাদার নারী-পুরুষকে নিজের নামসর্বস্ব খবর বাংলাদেশ পত্রিকা ও চ্যানেল বাংলা ইউটিউব চ্যানেলে আইড কার্ড বানিয়ে দিয়ে তাদের সমন্বয়ে একটি গ্রুপ তৈরী করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সৈয়দ শফিকুর রহমান পলাশ নামক সাবেক এক পরিবহন ব্যবসায়ীকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কথিত সভাপতি পদে বসিয়ে পলাশেরই মালিকানাধীন রুপনগর থানাধীন এভিনিউ-৩ এর হাজী রোডের ৫ নম্বর বাড়িটির নিচতলার পুরো ফ্লোরটিতে মিরপুর প্রেসক্লাবের সাইনবোর্ড লাগিয়ে বিতর্কিত কার্যক্রম শুরু করে।
জনশ্রুতি রয়েছে, এই বাড়িটির প্রকৃত মালিকানা নিয়ে মামলা চলছে। মীর পলাশ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়টি নিজের দখলে রাখতে ঢাল হিসেবে কালা জাকিরকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিজে খবর বাংলাদেশ পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টার পদ ও বাড়িতে প্রেসক্লাবের সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিচতলার পুরোটাই ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছেন। প্রেসক্লাবের নামে কার্যক্রম শুরুর মাত্র দুই মাসের মাথায়ই তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি,চাঁদার দাবিতে কয়েকজনকে প্রেসক্লাবে আটকে রেখে নির্যাতনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে। মিরপুরের সাংবাদিকদের অনেকেই প্রতিবাদ করে বলছেন, কোন অদৃশ্য শক্তির বলে প্রেসক্লাব কার্যালয়ের নামে লোকজনকে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে টর্চারসেল তৈরীর ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পেলো সন্ত্রাসী কালা জাকির? এতে করে মিরপুরের প্রকৃত সাংবাদিকগণ প্রতিবাদী হয়ে উঠলে তাদেরকে হয়রানী করতে তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকসহ খবর বাংলাদেশ পত্রিকায় মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনেরও হুমকী দেয়। সর্বশেষ চলতি মাসের ১৬ ডিসেম্বর চম্পা নামে স্বামীর নির্যাতনের শিকার অসহায় এক নারী বিচারপ্রার্থী হয়ে আসলে কোনো সহযোগিতা না করে উল্টো নামধারী সভাপতি,সেক্রেটারিসহ অন্যান্যরা তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। এঘটনায় সময়ের কণ্ঠস্বরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে জাকির ও মীর পলাশ ক্ষিপ্ত হয়ে সময়ের কণ্ঠস্বরের স্টাফ রিপোর্টার রাজু আহমেদকে হয়রানি করতে ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়।
কথিত সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে ভয়ংকর সন্ত্রাসী কালা জাকির গত ২৬/৫/২০১৩ তারিখে চুুরি করা একটি ওয়াল্টন ফিউশন-১২৫ সিসি মডেলের মোটরসাইকেল ও ০৪ রাউন্ড . ৩০৩ রাইফেলের গুলিসহ গাবতলীর ধানসিঁড়ি হোটেলের সামনে থেকে দারুসসালাম থানার এস.আই রাকিবুল হাসান কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত এই অস্ত্র মামলায় আদালতের নির্দেশক্রমে ১ দিনের রিমান্ডে সবকিছু স্বীকার করে দীর্ঘদিন জেল খাটে। দারুস সালাম থানার মামলা নং-২৫,তারিখ-২৫/৫/২০১৩। নিজেকে সাংবাদিক ও সঙ্গীয় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে গত ১৩/৮/২০১২ইং তারিখে সুমন মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে মারধোর করে ঢাকা মেট্রো-হ-২৭-৮৩৫৯ নাম্বারের রকেট ১২৫ সিসি মোটরসাইকেল ছিনতাই করে গ্রেপ্তার হন জাকির। কাফরুল থানা মামলা নম্বর-২৮,তারিখ-১৪/৮/২০১২। এমামলায় গ্রেপ্তার হলে সাত দিনের রিমান্ডে কাফরুল থানার এসআই মাসুদুর রহমানের নিকট সমস্ত অপরাধ স্বীকার করে সে।
মাসুদ রানা নামে এক ব্যবসায়ীর ছবির সাথে কালা জাকিরের নিয়ন্ত্রিত দেহব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের এক নারীর নগ্ন ছবি জুড়ে তার নিকট এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। রানা টাকা দিতে অস্বীকার করায় ফেসবুকের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিয়ে ছবটি ফের সরিয়ে ফেলতে এক লক্ষ টাকা দাবি করে। রুপনগর থানার মামলা নং-০৩/২৮,তারিখ-৪/৫/২০১২।
গত ০৫/৩/১৭ ইং তারিখে পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ৩ নম্বর রোডের বাসিন্দা নাজমা বেগমের নিকট নতুন বাড়ি করার চাঁদা হিসেবে ৫০,০০০ টাকা দাবি করেন জাকির ও মারুফ। চাঁদা না দিলে এলাকা ছেড়ে দেয়ার হুমকীসহ নাজমার নতুন বাড়ি দখল করে নেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাদাবির ঘটনায় ঢাকা মহানগর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতের মামলা নং-৩৭/১৭। তারিখ-৩০/০৪/১৭। প্রতারণার ঘটনায় শাহ আলী থানার নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলা নং-২৪,তারিখ-০৯/৫/২০১২।
শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তিকে নামধারী খবর বাংলাদেশ পত্রিকার ৩৩ শতাংশ শেয়ার বিক্রির নামে ভুয়া চুক্তিতে প্রতারণার মাধ্যমে ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ডিআইজি,সিটিএসবি বরাবর অভিযোগের স্মারক নম্বর-আর-০৭,তারিখ- ১৮/০১/২০১৬।
সুধীর কুমার বড়ুয়া নামে এক ব্যাক্তিকে সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এঘটনায় পল্লবী থানার জিডি নং-১৫৬৭,তারিখ-২৩/১২/২০১৫ইং। কুখ্যাত চাঁদাবাজ জাকির হোসেন গত ২৯ /১১/২০১৫ ইং তারিখে বি.আর.টি এর কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে খবর বাংলাদেশ পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। এঘটনায় আলতাফ হোসেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের ডিসি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। কয়েকদিন আগে মিরপুর থানা আওয়ামীলীগের নেতা সামসুল হকের বিরুদ্ধে মিথ্যা নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে তার নিকট ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে জাকিরের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের এক নেত্রীকে উত্যক্ত করার ঘটনায় তাকে আটক করে হাত-পা বেঁধে গণধোলাই দিয়েছিলো ছাত্রলীগের কর্মীরা। বন্ধুর সম্পদ আত্মসাৎ করতে সন্তান সহ নিজের বন্ধুর স্ত্রীকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে বিয়ে করার মত জঘন্য অভিযোগও রয়েছে সন্ত্রাসী কালা জাকিরের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক এলসি জালিয়াতি সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতে থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ এর ঘটনায় ক্যান্টমেন্ট থানার মামলাটির তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করেছে সিআইডি। কালা জাকিরের বিরুদ্ধে সিআর মামলাও রয়েছে। মামলা নং-৪৩১/১৫। এছাড়া ঝিনাইদহ থানাতেও তার বিরুদ্ধে নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রয়েছে।
কথিত সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে এই কুখ্যাত ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী কালা জাকিরের ভয়ংকর সকল কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ, ভীত ও অসহায় গোটা মিরপুরবাসী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই সন্ত্রাসী কালা জাকিরের বিষয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে এটা গোটা মিরপুরবাসীর প্রানের দাবি।
সূত্র অন্যদিগন্ত -২২/১২/২০১৯