শামীমা নূর ওরফে পাপিয়া।


শামীমা নূর ওরফে পাপিয়া।
যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এক সাংসদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন শামীমা নূর ওরফে পাপিয়া। ওই তিনজনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। ১৫ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া এসব তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কাজ, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার অভিযোগে পাপিয়া, তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমনসহ চারজনকে গতকাল মঙ্গলবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে রাজধানীর বিমানবন্দর থানার পুলিশ।

পাপিয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা অবস্থায় বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২২ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন। ধরা পড়ার পর তাঁকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

পাপিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় অর্থ পাচার ও জাল টাকা রাখার ঘটনায় একটি মামলা এবং শেরেবাংলা নগর থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হয়। মামলার অপর দুই আসামি পাপিয়ার সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা।

এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রাজধানীর মহাখালীর সেতু ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করতে এবং তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, দলের মধ্যে যাঁরা অপকর্ম করছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করতে এবং তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক ও পাপিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কায়কোবাদ কাজী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার অপরাধজগৎ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে। মূলত যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী ও ঢাকার একজন সাবেক নারী সাংসদের আশ্রয়-প্রশ্রয় থেকে মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি করতেন। এ ছাড়া চাকরি দেওয়ার কথা বলে কিংবা বিদেশে পাঠানোর নামে অনেকের কাছ থেকে তিনি বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এই তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, নরসিংদীর এক ব্যক্তিকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে পাপিয়া তাঁর কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নেন। শেষ পর্যন্ত বিদেশে পাঠাতে না পারায় ওই ব্যক্তি টাকা ফেরত চাইলে তাঁকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তি থানায় মামলা করতে (গতকাল) এসেছিলেন। তাঁকে নরসিংদীতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

র‍্যাব জানায়, ২২ ফেব্রুয়ারি আটক করার সময় পাপিয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে বলে ক্ষমতার দাপট দেখানোর চেষ্টা করেন।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালের অক্টোবরে নরসিংদী শহরের বাসাইল এলাকায় নিজ বাসার সামনে তাঁর স্বামীর ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলি পাপিয়ার পেটে বিদ্ধ হয়। এরপর তাঁরা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ঢাকায় যুব মহিলা লীগের নেত্রী ও সংরক্ষিত আসনের এক নারী সাংসদের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা হয়। একপর্যায়ে ওই নারী সাংসদসহ যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রীর প্রশ্রয়ে এই দম্পতি অপরাধ চক্র গড়ে তোলেন।

প্রথম আলো